আরবি বিভাগে কেন পড়বেন? আরবি সাবজেক্ট রিভিউ

সাবজেক্ট রিভিউ আরবি

আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


আরবি বিভাগে কেন পড়বেন বা আরবি সাবজেক্ট কেন পড়বেন?



সাবজেক্ট রিভিউ আরবি,আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,আরবি বিভাগে কেন পড়বেন বা আরবি সাবজেক্ট কেন পড়বেন


আরবি বিভাগে কেন একজন ছাত্র ভর্তি হবে? বা কি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে আরবি বিভাগে ভর্তি হবে।
অনেকের অনেক উদ্দেশ্য থাকতে পারে তবে আমি এখানে আরবি বিভাগের লক্ষ্য উদ্দেশ্য তুলে ধরতে চেষ্টা করব যেন ছোট ভাইরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে লক্ষ্য ঠিক করে নিতে পারে।


এমন যেন না হয় তার উদ্দেশ্য একটা আর বিভাগের উদ্দেশ্য একটা। এরকম হলে একজন স্টুডেন্ট এর জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবার পর আমার সাবজেক্ট চয়েজ লিস্টে ১৬ টি সাবজেক্ট এসেছিল।আমি অনেক চিন্তায় পড়ে গেলাম কোন সাবজেক্টটা আমি নেব। এরকম অনেকের অবস্থা হয়।



তাহলে চলুন আরবি সাবজেক্ট নিয়ে আজ আলোচনা করি,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগ হচ্ছে একটি প্রাচীন বিভাগ, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানকালীন বিভাগ (১৯২১)।



মানুষের মাঝে আরবি বিভাগ নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে,তা হলো আরবি বিভাগ একটি ইসলামিক বিভাগ বা এখানে পড়লে আলেম হতে পারবে বা ইসলামিক স্কলার হতে পারবে। এটি একটি ভুল ধারণা। আমারও সেইম ধারণা ছিল তাই আলেম বা ইসলামিক স্কলার হওয়ার উদ্দেশ্যে আরবি বিভাগে ভর্তি হই।কিছু দিন পর নিজের উদ্দেশ্য অটোমেটিকভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়।



যা হোক,আরবি বিভাগ কোনো ইসলামিক বিভাগ নয়, আরবি বিভাগে পড়ানো হয় আরবি সাহিত্য। বাংলায় যেমন কবিতা,উপন্যাস ও গল্প ইত্যাদি পড়ানো হয় অনুরুপভাবে আরবি বিভাগেও পড়ানো হয়।
যেমন আরবি গল্প, রচনা,কবিতা,অনুবাদ, আরবি লিখতে পারা,বলতে পারা, ইত্যাদি।  সাথে সাথে বাংলা, ইংলিশ, আইসিটি,বাংলাদেশ স্টাডিজ, ইত্যাদি ব্যাসিক বিষয়গুলোও পড়ানো হয়।



 আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আরবি সাহিত্যে প্রেম,ভালোবাসা,মদ ,নারী, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ও জীবন বৈচিত্র যতটা সমৃদ্ধভাবে আছে অথবা যতটুকু পড়ানো হয়, অন্য কোন ভাষার সাহিত্যে সেটা নেই। যদি সাহিত্যের মানের ব্যপারে বলি তবে আরবি সাহিত্যকে প্রথম শ্রেণিতে রাখতেই হবে।


যেহেতু এটি আরবি ভাষা তাই এখানে আরব জাতি ও গোষ্ঠীর ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত আছে। আর ইসলাম যেহেতু আরব থেকে বিশ্বব্যপি ছড়িয়েছে তাই আরবি ভাষায় ইসলামিক কিছু বিষয় চলে আসে। এটা ভাষার সাথে তাদের সভ্যতার সম্পর্ক। আরেকটি সম্পর্ক হচ্ছে ইসলাম ধর্ম গ্রন্থ আরবিতে।



আপনার দৃঢ় ইচ্ছে থাকলে  আরবি বিভাগে পড়ে আপনি ভাষা ভালোমত আয়ত্ত্ব করতে পারবেন,পাশা পাশি আরব জাতির বিভিন্ন অজানা তথ্য জেনে অনেক মজাও পেতে পারেন। তাছাড়া ভাষা ও সাহিত্যের মধ্যে এক ধরণের রস পাওয়া,যদি কেউ সেটা বুঝতে পারে তকে সে সে ভাষায় দক্ষ্য হতে পারে।


আমি  অন্য বিভাগকে ছোট করতে বলছি না,বিষয়টা হচ্ছে যে, অন্যন্য বিভাগের তুলনায় আরবি একটু কঠিন, কারণ আমরা এই ভাষার সাথে এতটা পরিচিত না। যার কারণে অধিকাংশ ছাত্র হাল ছেড়ে দেয়। তবে যারা সত্যিকার অর্থে আরবি শিখতে চায় তারা ছাড়া কেউ আরবি বিভাগে ভর্তি না হওয়াই উচিৎ।


এটা অন্যন্যা বিভাগের মত পরীক্ষার আগের দিন পড়লেই ভালো পরীক্ষা দেয়া যায় না। সে জন্য প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন পড়তে হয়, সাথে সাথে পিছনে যা পড়া হয়েছে সে জ্ঞানটাও ধরে রাখতে হয়। আরেকটা ব্যপার হচ্ছে আরবি বিভাগে ভর্তি হওয়ার একটি শর্ত হলো মাদ্রাসা থেকে দাখিল বা আলিম থাকতে হবে। অন্যথায় ভর্তি হওয়া যাবেনা, তার কারণ হচ্ছে স্কুল - কলেজ থেকে এসে কেউ আরবি পড়তে পারবেনা।এটা চরম কঠিন হয়ে যাবে। তবে চেষ্টা থাকলে সবই সম্ভব।



কিছু কথা না বললে নয়,বর্তমানে ঢাবি আরবি বিভাগ একটি গতিশীল বিভাগ,সুসজ্জিত শ্রেণি কক্ষ।  ছাত্ররাও খুব উদ্যমী ও পরিশ্রমী, ডিপার্টমেন্টে রেজাল্ট ভালো করার সাথে সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান তাদের রয়েছে।




যদি বিতর্ক অঙ্গনের কথা বলি তবে প্রথমে বলতে হয় মাহদি ভাইয়ের কথা, মাহদি হাসান ভাই, উনি ঢাবি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। তিনি সত্যিকার অর্থে অলরাউন্ডার। প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদকও পেয়েছেন। এখন আরবি বিভাগের টিচার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। DUDS এর বর্তমান সভাপতি রাকিব ভাই। মোট কথা ঢাবির প্রথম সারির সাবজেক্ট গুলোর নাম বলতে গেলে আরবি বিভাগের নামও বলতে হবে। প্রতিটা হলের ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক বা কোনো একটি পর্যায়ে আরবি বিভাগের স্টুডেন্টদের পদচারণা আছে।



তার পর আরও যত বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক সংগঠন বা ক্লাব আছে সব গুলোতেই আরবি বিভাগের ছাত্রদের পদচারণা রয়েছে। আরবি বিভাগের ছাত্র নাজমুল ভাইয়ের নেতৃত্বে একটি আরবি ম্যাগাজিন বের হয় যা সারা দেশের বড় বড় মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের প্রসংশার পাত্রে পরিণত হয়েছে।এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগের ছাত্ররা ফ্রি তে আরবি শেখাচ্ছে। অনেক ছাত্র মাইগ্রেট করে অন্য বিভাগ থেকে আরবি বিভাগে চলে আসার প্রবণতাও রয়েছে।




মজার ব্যপার হচ্ছে বর্তমানে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েও আরবি নিচ্ছে। মোট কথা আরবি বিভাগ এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। গতবছর আরবি বিভাগ থেকে কাতারে ডিবেটিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে একদল ছাত্র।




এবার যদি বলি  শিক্ষকদের কোয়ালিটি নিয়ে তবে গর্বের সাথে বলতে হয় যে, আরবি বিভাগের বেশির ভাগ  শিক্ষক বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করে এসেছেন। দক্ষ্য ও যোগ্যতার ব্যপারে বলতে গেলে অবশ্যই  বলতে হবে, যথেষ্ট ভালো, দক্ষ্য এবং আন্তরিক শিক্ষকগণ এই বিভাগে আছেন। এখানে অনেক টিচার আছেন যারা বিসিএসে ভালো ভালো ক্যাডার পেয়েও যান নি, তারা আরবি বিভাগে এখন শিক্ষক হয়ে আছেন।




যদি আরবি বিভাগের চাকুরির বাজার নিয়ে বলতে যাই তবে বলতে হয়, বাংলাদেশের চাকুরির বাজারে সাবজেক্ট অনুযায়ী ক্যারিয়ার বলতে কিছু নেই। তবে কয়েকটি সাবজেক্ট ছাড়া। যে কয়টা আছে তাও সামান্য বলা যায়। চাকুরি সম্পূর্ণ নিজের বিভিন্ন এক্সট্রা কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে। কলা অনুষদে অন্যান্য সাবজেক্ট পড়ে যেমন বিসিএসে ছাত্ররা যেতে পারে তেমনি আরবি বিভাগে পড়েও যেতে পারে। আরবি বিভাগ থেকে এ বছর একজন শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। তাছাড়া এবারে বিসিএসে চাইলে আরবি বিভাগ থেকে ছাত্ররা ১৮ টি ক্যাডার থকে যে কোনো ক্যাডেট চয়েস করতে পারবে।
নিজের পররিশ্রম আর কোয়ালিটি মূল ব্যপার।



তাছাড়া আরবি বিভাগের ছাত্রদের জন্য রয়েছে কিছু এক্সট্রা সুযোগ, যেমন বাংলাদেশের প্রতিটা মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক পদে নিয়োগ হতে পারে, যে সমস্ত কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি রয়েছে সেখানেও সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া আরব রাজ্য বা মধ্যপ্রাচ্যে তো আরবি বিভাগের চাকুরির বাজার রয়েছে। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি গুলো থেকে অফার আসে। তবে সে জন্য দক্ষ্য লোক লাগে।


দূঃখেরর বিষয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অনেক ছাত্ররা তেমন পড়া-শুনা করে না যার ফলে ব্যর্থ হয়। সর্বক্ষেত্র কোয়ালিটি আর যোগ্যতাই মূল বিষয়।


সর্বশেষে একজন স্যারের কথা না বললেই নয় তিনি হচ্ছেন ড. ফজলুর রহমান স্যার। তিনি সারা বাংলাদেশে আলিয়া ও ক্বওমী মাদ্রাসার অঙ্গনে পরিচিত একটি মুখ। স্যার আরবি ভাষার উপর কয়েকটি অভিধান রচনা করেছেন,  মুজামুল ওয়াফি আরবি বাংলা অভিধান, পকেট আরবি অভিধান, বাংলা আরবি অভিধান।




বর্তমানে ফজলুর রহমান স্যার নিজের ডিকশনারিকে সবার ব্যবহারের সুবিধার জন্য প্লেস্টোরে রিলিজ দিয়েছেন।কেউ চাইলে এখান থেকে ইনস্টল করতে পারেন, আমি লিংটি দিচ্ছি।

Al-wafi Arabic Bangla dictionary
clic here to install A2B Dictionary

৪টি মন্তব্য:

  1. আরবি সাহিত্য কি আরবিতে পড়ানো হয়?

    উত্তরমুছুন
  2. তারমানে কি সাধারণ মানুষ আরবি বিভাগ নিতে পারবে না? মাদ্রাসার ছাত্র ছাড়া? নাকি সবাই নিতে পারবে কিন্তু কঠিন হবে কোনটা?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. সবাই নিতে পারবে কিন্তু মাদ্রাসা ছাত্র ছাড়া অন্যদের জন্য একটু কঠিন হবে

      মুছুন
  3. আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড মাদরাসা হলে আরবি নিতে পারেন,অন্যথায় একটু কঠিন হয়ে যাবে।

    উত্তরমুছুন

Barcin থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.