মুয়াজ্জিন ও শিক্ষক আবশ্যক : সাক্ষাৎকারে যাওয়ার আগে আপনার যা জানা উচিত
মুয়াজ্জিন ও শিক্ষক আবশ্যক : সাক্ষাৎকারে যাওয়ার আগে আপনার যা জানা উচিত
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় ইনফোবিডি২৬৬ বাসী। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। এটা মুয়াজ্জিন নিয়োগ ভেবে যারা এসেছেন তাদের জন্য দূঃখিত তবে এই লেখাটি হয়ত কারো জন্য অনেক উপকারে আসতে পারে। আমি বলছিনা আমি খুব অভিজ্ঞ কিন্তু আমার একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা এখানে লিখতে চাচ্ছি। চলুন মূল কথায় আসি।
ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে যা জানা দরকার
সবার আগে জানা দরকার আপনি কোন পদে বা কোন বিষয়ে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন। শিক্ষক নিয়োগ এর সাক্ষাৎকারে নাকি ইমাম মুয়াজ্জিন বা অন্য কোনো নিয়োগের সাক্ষাৎকারে। আপনি যে সাক্ষাৎকারেই যান না কেন আপনার উচিত হবে সে বিষয়ের সাথে বা পদের সাথে সম্পৃক্ত সব রকম তথ্য জেনে নেয়া। কারণ এটা আপনার একাডেমিক পরীক্ষা নয় ; আপনার বাস্তব জীবনের পরীক্ষা। আপনি যেন উক্ত পদের সাথে যায় এমন সব বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন এরকম একটি প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। যত কষ্ট হোক আপনাকে এরকম একটি প্রস্তুতি নিতে হবে তাহলেই আপনি সেরা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তাছাড়াও আরও যে বিষয়গুলো জানা দরকার। কোনো কিছু না পারলে আমতা আমতা করে তাদের সময় নষ্ট না করে সরাসরি বলে দেয়া যে দূঃখিত এই মুহুর্তে মনে আসছে না।
কথা স্পষ্টভাবে বলার চেষ্টা করবেন। কথার মাঝে মাথা চুলকানো, নাক খুচানো এ জাতীয় বদ অভ্যাস পরিহার করতে হবে। মোট কথা সব কিছুই স্ট্রিংলি ম্যানেজ করার চেষ্টা করুন। অবশ্যই আগে সালাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবেন, নিজে নিজে না বসে একটু অপেক্ষার ভাব নিন বা অনুমতি নিন। আবার বিদায়ের সময় হাসি মুখে সালাম দিয়ে বিদায় নিন।
যা হোক আমি একদা শখের বসে একটি মুয়াজ্জিন ইন্টারভিউ তে গিয়েছিলাম। আমি ইন্টারভিউ তে যাওয়ার আগে মসজিদের ইমাম সাহেব এবং কমিটির সাথে এর দুদিন আগে কথা বলে আসছি। আজান দিয়েছি নামাজ পড়িয়েছি। তারা খুব পছন্দ করেছে। আমার যে যোগ্যতা আছে এত যোগ্যতা দেখে তারা আরো খুশি। আমিও খুশি। মনে মনে ভাবতেছি এই চাকরি করব নাকি না করব। বাসায় এসে সিদ্ধান্ত নিলাম কিছুদিন করব অথচ এখনও ফাইনাল সাক্ষাৎকার বাকী। এদিকে আমি সব কিছু পরিকল্পনা করে ফেলেছি কীভাবে কি করব বা ওখানে কীভাবে থাকব। যে হাদিয়া পাব এটা দিয়ে কীভাবে চলব বা ব্যয় করব। মোটকথা সব পরিকল্পনা শেষ। এই একসপ্তাহ ধরে শুধু প্ল্যান করেছি আর আজান মশক করেছি। মনে মনে ঠিক করেছি একটা ফাটাফাটি আজান দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে দেব।
অবশেষে একসপ্তাহ চলে গেল। সময় এসে গেল। মসজিদে গেলাম। সবাইকে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলাম। তখনও মনে হচ্ছে আমিই হব সেরা। সবার আগে আমার নামটা লিখে দিলাম। যথারীতি আমাকে সবার আগে ইন্টারভিউ তে ডাকল।
বোর্ডের সামনে গিয়ে সালাম দিলাম। আজান দিতে বললেন। দিলাম একটা আজান খিচ্চা। সবাই দেখি খুশি খুশি মানে আমি শুনতেছি মানুষের ফিস ফিস! তাছাড়া অনেকের দিক থেকে মুচকি হাসি আসল। ওখানে অনেক মুসল্লিরা ছিলেন।
যা হোক এবার অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন করার পালা। আমি তো পুরাই বোকা হয়ে গেলাম। আমি যেন আকাশ থেকে পড়েছি। এর আগে ইন্টারভিউ দেখেছি শুধু আজান ইকামাত শুনে আর তিলাওয়াত শুনে। আমার তিলাওয়াত অবশ্য শুনেছে। আলহামদুলিল্লাহ হাফেজ বিধায় তিলাওয়াত শুদ্ধ আছে সাথে আল্লাহর দান স্বর।
ইমাম সাহেবের প্রথম প্রশ্ন,
আপনি তো মুয়াজ্জিন হবেন তাহলে মসজিদে আগে প্রবেশ করবেন, আচ্ছা মসজিদে প্রবেশের সুন্নত গুলো বলেন।
হুজুর কীভাবে যেন গল্পের ছলে বললেন আমিঅ উনার কথা গল্পের মত ভেবে আমিও গল্প বলা শুরু করলাম। আমি বলা শুরু করলাম সিব কিছু যা মসজিদে প্রবেশে পর থেকে যা কিছু করতে হয় মানে সালাম দেয়া, লাইট লাগানো, ডান পা দিয়ে প্রবেশ, দোয়া পড়া, দুরুদ পড়া, আরো কত কি যে বললাম এখন মনে নেই।
যা হোক ইমাম সাহেব আমাকে থামালেন।
পরে উনি বলে দিলেন যে মসজিদের প্রবেশের সুন্নত ৫টি এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নত ৫ টি।
মসজিদে প্রবেশের সুন্নত পাঁচটি
- বিসমিল্লাহ পড়া
- ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা
- দোয়া পড়া
- দুরুদ পড়া
- ইতেকাফের নিয়ত করা
দোয়াটি একসাথে এভাবে পড়া যায়,
বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহি আল্লাহুম্মাফতাহ্ লি আবওয়াবা রাহমাতিক
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নত পাঁচটি
- বিসমিল্লাহ পড়া।
- বাম পা দিয়ে বের হওয়া।
- বাম পায়ের জুতার উপর বাম পা রেখে ডান পা দিয়ে জুতা পড়া।
- দোয়া পড়া।
- দুরুদ পড়া।
তারপর জিজ্ঞেস করলেন সাহু সাজদাহ কখন দিতে হয়, বল্লাম ভুলে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে।
আবার প্রশ্ন নামাজের ওয়াজিব গুলো বলেন। অনেক কষ্টে খুঁজে খুঁজে ৫-৬ টা বলছি পরে উনি বললেন আচ্ছা বুঝেছি, ধরে নিলাম আপনি পারেন বা জানেন।
এবার আবার প্রশ্ন জানাজার ফরজ কয়টি। দুঃখজনক হলেও সত্য আমি এর উত্তর দিতে পারিনি। ফরজ দুইটি, দাঁড়িয়ে জানাজা পড়া আর মাইয়্যতকে সামনে রাখা।
তারপর আবার প্রশ্ন যদি ৩য় ও চতুর্থ রাকাতে কেউ সুরা মিলিয়ে ফেলে তাহলে কি সাহু সিজদা দিতে হবে।
আমিঃ জ্বি দিতে হবে।
ইমাম সাহেবঃ উত্তর সঠিক নয়, দিতে হবে না।
যা হোক একজন মুয়াজ্জিন এএ কাছে এভাবে ইমাম সাহেব প্রশ্ন করছিলেন আর মুয়াজ্জিন সাহেব ব্যর্থ হচ্ছিলেন।
আসল কথাঃ
উপরে যে প্রাশ্নগুলো ইমাম সাহেব করেছেন এগুলো প্রায় সকলের জানা কিন্তু একটু প্রস্তুতি না থাকার কারণে সব কিছুই কেমন যেন উলট পালট হয়ে গেল। তাই আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার একটাই উদ্দেশ্য তা হচ্ছে কেউ ইন্টারভিউ দিতে গেলে অবশ্যই খুটিনাটি বিষয়ে দেখে প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন।
ওহ! ফলাফল শুনে যাবেন না? আমার ফলাফল কি আসল? ইন্টারভিউ শেষে দেখা গেল আমি ২য় হয়েছি। আরেকজন ভাই এই প্রশ্নের অনেকগুলো সঠিক দিতে পেরেছেন তাই প্রথম হয়েছেন যদিও উনি হাফেজ ছিলেন না এবং আজান তিলাওয়াত মুসল্লীদের সে রকম পছন্দ হয়নি তবুও তিনি প্রথম হয়েছেন তাই উনিই সেরা। আর আমার ওভার কনফিডেন্স এর যা হবার তাই হলো।
কোন মন্তব্য নেই