শুক্রবারের বিশেষ আমল : জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ১৪ টি আমল ও ফজিলত
শুক্রবারের বিশেষ আমল : জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ১৪ টি আমল ও ফজিলত
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে জুমার দিনের বিশেষ কিছু আমল নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হলাম । শুক্রবার মুসলিমের জন্য বিশেষ দিন। এই দিনে কিছু বেশেষ আমল ও ফজিলত রয়েছে। জুমার দিনে একটি সময় আছে যে সময় বান্দা দোয়া করলে আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করে নেন। তো জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল ও ফজিলত নিয়ে আজকের লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইল।
জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে জুমার দিনে জুমার নামাজ আদায় করা। নিচে ধারাবাহিকভাবে জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ১৪ টি আমল ও ফজিলত উল্লেখ করা হলো।
১) জুমার নামাজ আদায় করা।
হাদিস শরীফে আসছে যে ব্যক্তি অলসতা করে পর পর তিনটি জুমায়ে অংশগ্রহণ না করে তাঁর জন্য আল্লাহ তায়ালা হেদায়েতের নূরকে ছিনিয়ে নেন অর্থাৎ তার অন্তরে মহর বা সিল মেরে দেন ফলে সে হেদায়েত থেকে দূরে চলে যায়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ হাদিস,
যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভোরে উঠে গোসল করে পরিপাটি হয়ে তাড়াতাড়ি মসজিদে হাজির হলো, এবং ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী স্তানে বসল,জুমার খুৎবা বা আলোচনা মনোযোগ সহকারে শুনল, এবং চুপচাপ থাকল, তাহলে সে ব্যাক্তিকে আল্লাহ তায়ালা বাসা থেকে মসজিদে আসার প্রতি কদমে একবছর রোজা রাখার এবং একবছর রাত জেগে ইবাদত করার সওয়াব তাঁর আমল নামায় দিবেন।
সুবহানাল্লাহ!
জুমার দিনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি আমল
২) ভোরে ঘুম থেকে উঠা
অর্থাৎ অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু আগে ঘুম থেকে উঠা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা শুক্রবার এলে আরো দেরি করে ঘুম থেকে উঠি এবং এত বড় ফজিলত থেকে বঞ্চিত হই। তাই আমাদের উচিত হাদিসের ফজিলত অর্জন করার জন্য জুমার দিনে একটু আগে উঠা।
৩)গোসল করা পরিপাটি হওয়া
অনেক আলেমগণ এখানে পরিপাটি বা গোসল দ্বারা উদ্দেশ্য করেছে যারা বিবাহিত তারা সহবাস করে ভোরে গোস্ল করবে এবং পরিপাটি দ্বারা চুল মুচ এসব অবাঞ্ছিত লোম কাটবে।
মূল কথা হচ্ছে জুমার দিন গোসল করে পবিত্র ও পরিপাটি হওয়া। পরিপাটি হয়ে সেজেগুজে মসজিদে যাওয়া। কারণ শুক্রবার দরিদ্র মুসলিদের জন্য এক ধরনের হজের দিন। এই জন্য পবিত্র ও পরিপাটি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া জুমার দিনে আমরা অনেক মানুষ একত্রিত হই তখন গোসল না করে গেলে এটা জীবাণু ছড়াতে পারে। গন্ধ আসতে পারে। তাই গোসল করে মসজিদে যাব।
৪)আগে আগে মসজিদে হাজির হওয়া
মসজিদে আগে আগে চলে যাওয়া। অর্থাৎ মসজিদে গিয়ে নামাজের অপেক্ষা করা। অন্যদের আগে যাওয়া। এছাড়া মসজিদে আগে আগে প্রবেশ করার অনেক ফজিলত রয়েছে। সবচেয়ে বড় ফজিলত হচ্ছে মসজিদে প্রবেশের পর থেকে ফেরেশগণ বান্দার জন্য দোয়া করে যদি মসজিদের আদব রক্ষা করে অবস্থান করা হয়। তাই জুমার দিনে মসজিদে আগে প্রবেশের উপর হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে।
৫)ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী হয়ে বসা
যারা আগে মসজিদে যায় সাধারণত তারা ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী হয়ে বসার সুযোগ পায়। ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী হয়ে বসলে সব আলোচনা শোনা ও বোঝা সহজ হয়। এই জন্য হাদিসে ইমাম বা খতিব সাহেবের নিকটবর্তী হয়ে বসার কথা বলা হয়েছে। অনেকে মনে করতে পারেন এখন তো স্পিকার বা মাইকে আলোচনা শোনা যায়। তাদের জন্য একটি উদাহরণ আলোর কাছে বসা আর আলো দূর থেকে দেখা এক নয়। কাছে বসলে মনের মধ্যে আলাদা জাগানিয়া তৈরি হয়। কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে ইচ্ছে হয় এবং পরে আমল করার ইচ্ছে জাগে। তাই যথাসম্ভব ইমামের কাছে বসে আলোচনা শোনা উচিত।
৬) মনোযোগ সহকারে খুৎবা শোনা
হাদিসে বর্ণিত ফজিলের চার নাম্বার হচ্ছে মনোযোগ দিয়ে আলোচনা বা খুৎবা শোনা। কাউকে ডিস্টার্ব না করা। কথা বার্তা বা সাইড টক না করা। চুপচাপ থেকে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শোনা। যখন আমরা খুৎবা মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারব তখন আমল করার ইচ্ছে হবে। তাই আলোচনার সময় চুপ থাকা চাই।
৭) চুপচাপ থাকা কোনো কথা না বলা
অনেকে দেখা যায় খুৎবার সময় কথা বলে, ইশারা দেয়। আবার বাচ্চাদের ধমক দেয়। এগুলো করা যাবে না। খুৎবার সময় কোনো কথা বলা যাবে না। খুৎবা শোনা ওয়াজিব। খুৎবার সময় ইশারা বা কাউকে ধমক দেয়া এগুলো ওয়াজিব তরক করার শামিল। তাই খুৎবার সময় চুপথাকা দরকার।
৮) জুমার দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা
হাদিস শরীফে আছে, জুমার দিন এমন একটা সময় আছে যখন বান্দা দোয়া করলে আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করে নেন। তবে এই সময়টা কখন এটা হাদিসে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি লাইলাতুলকদর এর মত। যেন মানুষ জুমার দিন সারাক্ষণ ইবাদত ও দোয়ায় মশগুল থাকে। তবে বেশিরভাগ উলামায়ে ইসলাম মত দিয়েছেন এই সময়টা আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের আজান পর্যন্ত সময়ে হয়ে থাকে।
অথচ আমাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় উল্টো। আমরা জুমার দিনের আসরের পর বিভিন্ন আড্ডায় ব্যস্ত থাকি। সাপ্তাহিক ছুটি তাই বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা। সামাজিক গেট টুগেদার বা পারিবারিক আড্ডা। মোট কথা জুমার দিনের আসরের পরের সময়টা আমরা হেলায় খেলায় নষ্ট করে দেই। আমাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা আমল করার তাউফিক দিন
৯) জুমার দিনে বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা
দুরুদের ফাজিলত বলে শেষ করা যাবে না। আল্লাহর রাসূলের প্রতি দুরুদ পড়লে উনার কোনো লাভ ক্ষতি নেই। কিন্তু আমরা যদি তাঁর প্রতি দুরুদ পড়ি তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি রহমত নাজিল করবেন। তাছাড়া হাদিসে আছে যে ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর প্রতি একবার দুরুদ পড়ে আল্লাহর রাসূল সাঃ তার প্রতি দশবার দুরূদ পাঠ করেন। তাছাড়া দুরূদ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর রমহমতে কঠিন থেকে কঠিন বিপদ থেকেও মুক্তি পেতে পারেন। তাই জুমার দিন বেশি বেশি বা অনবরত দুরুদ পাঠ করুন। অন্যান্য সময় দিনে অন্তত ২০০ বার দুরুদ পাঠ করুন। প্রত্যেকবার দুরুদ পড়লে ফেরেশতাগণ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আপনার দুরূদ পৌঁছে দেন আর আপনার নামা ও বাবার নাম বলে দেন। সুবহানাল্লাহ।
তাই বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করুন।
তাইতো আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন তোমরা জুমার রাতে এবং জুমার দিন বেশি বেশি দুরুদ পাঠ কর।
১০) কাতার ভেংগে সামনে না যাওয়া
অনকে দেখা যায় শেষে এসে সবাইকে ডিংগিয়ে আগে গিয়ে বসার চেষ্টা করে। এটা মুটেও ঠিক নয়। এর দ্বারা মানুষের কষ্ট হয়।
১১)সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা
হাদিসে এসেছে সূরা কাহফ বান্দার জন্য কিয়ামত এর দিন নূরের ভুমিকা পালন করবে। বান্দার জন্য নূর হবে। তাছা দাজ্জালের ফিৎনাহ থেকে আল্লাহ হেফাজত করবেন। তাছাড়া আরেক হাদিসে আসছে সুরা কাহফ পাঠকারীর জন্য একজুমা থেকে আরেক জুমার মধ্যেবর্তী সময়কে নূর দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেন।
১২) সুগন্ধি ব্যবহার করা
জুমার দিনে আতর, সুগন্ধি জাতীয় হালাল কিছু ব্যবহার করা সুন্নত। তবে কারো এলার্জি জনিত সমস্যা থাকলে তাদের ব্যবহার করা সুন্নত নয়।
১৩) পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া
পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়ার ব্যপারেই মূলত ফজিলতগুলো বলা হয়েছে। তাই মসজিদে জুমার দিন পায়ে হেটে যাওয়া সুন্নত তবে কারো সমস্যা থাকলে অন্য ব্যপার।
১৪) তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করা
এটা জুমার দিনের খাস আমল না কিন্তু মসজিদে আগে প্রবেশ করে তাহিয়াতুল মসজিদ আদায়া করতে পারেন।এটা অনেক সওয়াবের আমল।
এছাড়াও জুমার দিনে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও নফল নামাজ কাদায় করতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই