বুক রিভিউ : চীন বিপ্লবের ৭০ বছর
বুক রিভিউ : চীন বিপ্লবের ৭০ বছর
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় ইনফোবিডি২৬৬! আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একটু ভিন্নতা। অর্থাৎ বুক রিভিউ। বইয়ের নাম চীন বিপ্লবের ৭০ বছর। আশা করি আপনাদের কাছে ভালোই লাগবে। চলুন তাহলে মূল কথায়।
বই ও লেখিক পরিচিতি
বই : চীন বিপ্লবের ৭০ বছর
লেখক : তারেক শামসুর রেহমান।
উৎসর্গ : অধ্যাপক ডা. নাজির আহমেদ
প্রকাশনী : শোভা প্রকাশনী।
মোট অধ্যায় সংখ্যা আট।
১ম অধ্যায় : ভূমিকা।
২য় অধ্যায় : চীনের ইতিহাস।
৩য় অধ্যায় : চীনের সংস্কার কর্মসূচি।
৪র্থ অধ্যায় : শি জিন পিং ও একুশ শতকের চীন।
৫ম অধ্যায় : চীনের পররাষ্ট্রনাীতি।
৬ষ্ঠ অধ্যায় : চীনের সাথে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক।
৭ম অধ্যায় : চীনা মডেল।
৮ম অধ্যায় : উপসংহার।
এই বইটিতে প্রাচীন চীনের হান বংশের রাজত্ব থেকে শুরু করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ১৯৪৯ এর মহান নেতা ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাও জে দং,বাজার অর্থনীতির প্রবর্তক দেং জিয়াও পিং ও আধুকিন চীনের অন্যতম রূপকার, সাহসী ব্যক্তি," ওয়ান বেল্ট ওয়ান রুট "এর প্রবর্তক বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর শাসনামল ২০১৯ পর্যন্ত সবটাই আলোচনায় এসেছে।
বইটি আপনাকে অনেক অজানা বিষয়ের জানান দিবে। চীন যে নতুন সভ্যতা গড়তে যাচ্ছে এর সম্মুখ ধারণাও বলে দিবে অর্থাৎ ধারণা পাবেন।
★আরও জানবেন চীনের বিভিন্ন জাতি সম্পর্কে। হান বংশের রাজত্ব ও ধারণা " সিল্ক রুট " এবং কনফুসিয়াস মতবাদ সম্পর্কেও।
★এছাড়াও ব্রিটিশ উপনিবেশ ও দুটি আফিম যুদ্ধ(১ম:১৮৩৯-৪২ এবং ২য়:১৮৫৬-৬০) সম্পর্কে।১৮৪২ সালের নানকিং চুক্তি। তাইপিং বিদ্রোহ(১৮৫০),তিয়েনসিয়েন সন্ধি(১৮৫৮)চীন-জাপান যুদ্ধ(১৮৯৪-৯৫)সম্পর্কে।
★আরও জানতে পারবেন মাও জে দং ও তার পরবর্তী সংস্কার সম্পর্কে।(শুদ্ধি অভিযান,শত ফুল ফুটতে দাও,Great leap forward program, সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে।
★এছাড়াও তিয়েন আন মেন স্কয়ারে বিপ্লব ও পরবর্তী প্রভাব সম্পর্কে।
★আরও জানতে পারবেন দেং জিয়াও পিং এর পলিসি, সংস্কার ও শাসন সম্পর্কে। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে সমাজতান্ত্রিক দেশে বাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হয় ও এর প্রভাব । তিনি সোভিয়েন ইউনিয়ন ও কিউবার মতো ধ্রুপদি সমাজতান্ত্রিকতা গ্রহণ করপননি। গর্ভাচেভের দুটি ধারণা(গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রোইকা)একসাথে গ্রহণ করেননি।রাজনীতিতে কমিউনিজম ঢুকাননি।রাজনীতিতে কোনো সংস্কারও আনেন নি।জোর দিয়েছেন অর্থনীতি ও দারিদ্র্য থেকে জনগণকে বেরিয়ে আনতে। তিনি তা পেরেছেন। দারিদ্র্য সীমার নিচ থেকে ৮০ কোটি মানুষকে বেরিয়ে আনতে সক্ষম এই চীন।
তিনি বলতেন : Poverty is noot socialism, To bee rich is glorious. ফলে চীন মাথা উঁচু করে আজ বিশ্ব দরবারে দাঁড়িয়ে।
★আরও জানবেন আধুনিক চীনের আয়রন ম্যান ও দেং এর অন্যতম উত্তর সূরী শি জিন পিং সম্পর্কে।তিনি "ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড" সম্পর্কে ধারণা দেন। ২০৪৯সালের আগে তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হাতে নেন। এর দ্বারা যুক্ত হবে ৬৫ দেশ।এটিকে ৬টি করিডোরে ভাগ করা হয়েছে। এর আওতায় কাশগড় থেকে গাওদার বন্দর পর্যন্ত ট্রান্স কারাকোরাম রোড হয়ে গেলো। তাই এশিয়ার দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ ভারতের পেট কামরাচ্ছে।
চীন-বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার (সিবিআইএম) ও একটা করিডোর। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর এর আওতায় হওয়ার কথা ছিলো। বন্ধুদেশ ভারতে অসন্তোষের কারণে তা রাখাইনে সম্পন্ন হয়েছে।ওখান থেকে চীন পাইপ লাইন নির্মাণ করেছে, এখন রেললাইনের কাজ চলতেছে। তবে ভারত নিয়েও বেশ আলোচনা-সমালোচনা ও গবেষণা আছে এই বইয়ে।
এছাড়া চীনের versatile ব্যবসা ও অর্থনীতি,কূটনীতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
যেমন:----
- চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ ও সম্পর্ক(লাদাখ,গালওয়ান,অরুণাচল)
- চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ,চীনা ঋণ ও সম্পর্ক।
- চীন-রাশিয়া সম্পর্ক,সংগঠন ও কমিউনিজমে আলাদা সংস্করণ।
- চীন- দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া সম্পর্ক।
- চীন-ইউরোপ সম্পর্ক ও চীনা ঋণ।
- চীন-আফ্রকিা সম্পর্ক,সমযোতা ও আফ্রিকার উন্নয়ন।
- চীন-ল্যাটিন আমেরিকার সম্পর্ক ও ঋণ।
- চীন-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে ও জ্বালানি তেলের রিজার্ভ।
- চীন-মধ্য এশিয়া সম্পর্ক।
- ভারত মহাসাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে চীন-ভারত স্নায়ু যুদ্ধ।ভারত-জাপান-যুক্তরাষ্ট্র QUAD সামরিক জোট গঠন।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব।
আরো জানবেন চীনের রিজার্ভ, BRICS, ভবিষ্যৎ পররিকল্পনা,কর্তৃত্ব সম্পর্কে। আগামী বিশ্ব যে এশিয়ার এ বিষয়েও ধারণা পাবেন।
চীনের "সিল্ক রুট",ভারতের "কটন রুট",ভিয়েতনামের "দই মই" নামে অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
বিভিন্ন বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ও পত্রিকার রেফারেন্স পাবেন। নতুন করে চীনকে জানবেন। চীনা ঋণের ফাঁদ ও সংস্কার এবং ব্রিটেন,ফ্রান্স, স্পেন,পর্তুগিজদের ধ্রুপদি আগ্রাসন ও লুণ্ঠন নির্ভর উপনিবেশবাদের বিপরীতে চীনের সমৃদ্ধ নীতি,সংস্কারে ঋণদান সম্পর্কেও ধারণা পাবেন। চীনা অর্থনৈতিক নীতি হলো:Win win relationship. উভয় দেশের উন্নতি।
শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বন্দর,কেনিয়ার মোমবাসা বন্দরের লিজ নেওয়া,জাম্বিয়ায় চীনা ব্যাংক প্ররতিষ্ঠা,আফ্রিকার বিভিন্ন গেরিলা ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সমযোতা,আফ্রিকায় চীনের ইনভেস্টমেন্ট,জনগণকে প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নিয়েও জানতে পারবেন। সর্বোপরি, সামনে ২০৪৯ সালে চীন ১০০ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। এর আগে চীন কেমন হবে,এ নিয়েও লেখক আলোচনা করেছেন।
তবে বইটা কেবল চীনের অর্থনীতির মানদণ্ড ও একদলীয় শাসন নিয়ে আলোচনা। রাজনীতি এখানে গৌন বিষয়।কারণ,আধুনিক চীন অর্থনীতিকে বেশ প্রাধান্য দিচ্ছে।বলা চলে এটা এক অর্থনীতি নির্ভর রাজনীতি ও কূটনীতি। তবুও প্রয়োজনানুসারে আলোচনা হয়েছে।উইঘুর মুসলিম ও কনসেন্ট্রেশন সেল এবং পশ্চিমা প্রোপাগান্ডা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি এখানে।আরেকটা বিষয় হলো একই কথার বারবার আলোচনা যাতে পাঠক সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারেন।
চীন সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন
একটা বিষয় নজর কাড়লো,তা হলো পূর্বসূরিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। দেং এবং পিং যতই সংস্কার আনেন না কেনো তারা কনফুসিয়াস ও মাও কে গভীর শ্রদ্ধা করতেন ও করছেন। যা পিং ২০১৯ এ মাওসোলিয়ামে জানান দিয়েছেন। যা আমাদের নেতাদের মাঝে বেশ অভাব।আগেরকার রূপকারদের সম্মান তারা করেই সামনে এগিয়েছেন,এগিয়ে যাচ্ছেন,চীনকে বিশ্ব অর্থনীতির মডেলে দান করাচ্ছেন।
- লেখক: মিজানুর রহমান রীম
- শিক্ষার্থী, ৪র্থ বর্ষ,
- আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Thank you.
উত্তরমুছুনঅনেক তথ্যবহুল আলোচনা