সাত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। ঢাবি শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল চায় কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর সাত কলেজের ছাত্রসমাজ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে অবতীর্ণ।




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলন করছে কেন?

 
একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসা, এটা হচ্ছে জীব জগতের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর মানুষ,  মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসবে এটা তো মানবতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেক শ্রেণির মানুষ তাঁর অপর সমশ্রেণির মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এটাই স্বাভাবিক ছিল।কিন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য। ঢাকার উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে না।



ব্যপারটা হচ্ছে রাজধানীর নাম করা সাতটি কলেজ আর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। সবাই তাদের নিজ নিজ অধিকার আদায়ে বদ্ধপরিকর।


সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমস্যা :-



এক দিকে সাত কলেজের স্টুডেন্টদের দাবি,তারা ঢাবির অধিনে যাওয়ার পর সেশনজটসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক বছরেও মিলছেনা সাময়িক সনদপত্র। অনেকেই সব বিষয়ে ৬০-৭০ করে নাম্বার পেলেও ২-১ টি বিষয়ে একেবারে ফেইল করছে। পুনঃমূল্যায়ণের আবেদন করেও পাচ্ছেনা কোনো সাড়া। পড়াচ্ছেন নিজের টিচার আর খাতা মূল্যায়ণ করছেন ঢাবির টিচার, ফলে তারা এখানে শিক্ষার ঘাটতিজনিত সমস্যায় পড়েছে বলে মনে করছে। 


যেখানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইয়ারমেটরা নভেম্বরে তাদের ফাইনাল এক্সাম দিয়ে ফেলেছে,সেখানে ৭কলেজ এপ্রিলের শেষে এসেও পরীক্ষা নেয়নি। ক্লাসে উপস্থিতির ব্যপারেও বাধ্যবাধকতা করেছে সাত কলেজ প্রশাসান অথচ ন্যাশনালের অধিনে থাকাকালীন ক্লাসের চাপ ছিলনা। তাছাড়া স্টুডেন্টরা কখনো ঢাবির অধীনে যাওয়ার দাবীদার ছিলনা অথচ অধিভুক্ত করা হয়েছে।  অধিভুক্ত করার পর সবার আশা বড় হয়েছিল।  হয়ত ঢাবি অনেক কিছু করে দিবে কিন্তু দেখা যাচ্ছে কাজে তেমন কিছু হচ্ছেনা শুধু পরিচয় ছাড়া। এসব মিলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবি প্রশাসনের কাছে তাদের যৌক্তিক কিছু উত্থাপন করেছে। তারা নিয়মিত টাকা পরিশোধ করছে। দাবি করার অধিকার আছে। অধিকার বুঝে নিবে। ঢাবি প্রশাসন সে অধিকার দিতে বাধ্য।কিছু দাবি মেনেও নিয়েছে। তবে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে ঢাবি প্রশাসনের। প্রস্তুতি না নিয়ে মহাসাগরে ঝাপ দেয়ার মত অবস্থা। কারো উপকার করার সক্ষমতা না থাকলে আশা দেয়া ঠিক না। চুপ থাকাই শ্রেয়।আপনি কারো উপকার করতে না পারলে সমস্যা নেই কিন্তু উপকার করার কথা বলে আশাহত করা দোষণীয়।

ঢাবি শিক্ষার্থীদের সমস্যা :-


অন্য দিকে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে নানা ক্ষেত্রে। তাদের দাবি হচ্ছে, তারা দিনের পর দিন পরিশ্রম করে বাংলাদেশের হাজার হাজার স্টুডেন্টের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ঢাবিতে চান্স পেয়েছে। এ পাওয়া এত সহজ ছিল না। এ পরিচয় অনেক সাধনার ছিল। তারা এখন ঢাবির স্টুডেন্ট পরিচয় দিতে গিয়ে পড়ছে অদ্ভুদ সমস্যায়। মানুষ তাদের জিজ্ঞেস করছে অরিজিনাল ঢাবিয়ান নাকি ৭ কলেজ ঢাবিয়ান? টিউশনে গিয়ে জানা যায় আগের টিচারও ঢাবির ছিল কিন্তু ভালো পড়াতে পরত না। জিজ্ঞেস করলে জানা যায় তিনি ঢাবির অমুক ক্যাম্পাসের ছাত্র ছিলেন।


মোট কথা ঢাবি স্টুডেন্টরা তাদের কষ্টার্জিত অস্তিত্ব হুমকির মুখে দেখতে পাচ্ছে। আরো সমস্যা প্রশাসনিক কাজে। যেখানে ঢাবি প্রশাসন নিজেদের ৪৩হাজার স্টুডেন্টের সব কাজ সময়মত  করতে সমস্যায় ছিল, সেখানে আরো ২৬৭০০০ ছাত্র-ছাত্রীর দায়িত্ব নেয়া।  ঢাবি স্টুডেন্টরা যেখানে বিভিন্ন ফিস জমা দিতে গিয়ে রেজিস্টার ভবনে সিরিয়াল ধরে রীতিমত বিরক্ত, সেখানে সাত কলেজের স্টুডেন্টরা এসে সিরিয়ালে দাঁড়াচ্ছে। এসব তো সবাই মানতে পারেনা। সিরিয়ালে থেকে যখন ৭ কলেজের স্টুডেন্ট ঢাবি স্টুডেন্টকে জিজ্ঞেস করে, আপনি কোন কলেজের বা কোন ক্যাম্পাসের তখন বেচারার কেমন লাগতে পারে? তাছাড়া এখন ঢাবিও সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। পরীক্ষার রেজাল্ট দিতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।নিজ স্টুডেন্টদের প্রতি অবহেলা প্রকাশ পাচ্ছে। তাছাড়া সাত কলেজের সার্টিফিকেটের ডিজাইন এবং কালার সম্পূর্ণ ঢাবির মত এবং ঢাবির লগোযুক্ত। এটাও অনেকে মানতে পারছেনা। 


আরো একটি ব্যপার হচ্ছে যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক Ranking করা হয়, তখন অধিভুক্ত কলেজসহ করা হয়, ফলে ঢাবি দিন দিন সিরিয়ালে নিচের দিকেই যাচ্ছে। মোট কথা, তারা এমন আরো বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে এ সব সমস্যা কেউ সহজে মানতে পারছেনা।
কিন্তু কি করার? এ অবস্থার সৃষ্টি তো সাত কলেজের স্টুডেন্ট বা ঢাবি স্টুডেন্টরা করেনি।



এখন সবাই নিজেদের অধিকার চায়। ঢাবি স্টুডেন্টরা চায় সাত কলেজ বাতিল হোক কারণ প্রশাসনের কোনো সক্ষমতা নেই। এটা এক ধরণের প্রহসন।  আর সাত কলেজের স্টুডেন্টরা চায় তাদের অধিকার। তারা এখন বাতিল হওয়াটাও মানতে পারছে না। ফলে এ বিশাল ছাত্রসমাজের মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। কেউ কাউকে দেখতে পারছেনা এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনটা কখনো কাম্য নয়। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে এক প্লাট ফর্মে থাকা চাই।



আমি বলি সবাই এক হও। তার পর প্রশাসনকে সব অধিকার বুঝিয়ে দিতে বাধ্য করো।টিচার,ট্রেইনার, কর্মচারী,ভবন যা প্রয়োজন হয় সব কিছু ব্যবস্থা করতে বাধ্য করো। 


অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু বলতে গিয়ে থেমে যেতে হয়।
তবে এ পর্যায়ে এসে সবাই বুঝে যখন ব্যবসায় অনেক প্রফিট আসে।



সাত কলেজ্জ পরিবার ও ঢাবি পরিবার

কোন মন্তব্য নেই

Barcin থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.