ধর্ষণ বৃদ্ধির জন্য কি পোশাক দায়ী নাকি বিচারহীনতার সংস্কৃতি ??
ধর্ষণ বৃদ্ধির জন্য কি পোশাক দায়ী নাকি বিচারহীনতার সংস্কৃতি ??
প্রতীকী ছবি |
আজ কিছু ব্যপার নিয়ে আলোচনা না করলে নয়। দিন দিন দেশে ধর্ষণ বেড়েই চলছে। পথেঘাটে, যানবাহনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয়েও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এর থেকে রেহাই পাচ্ছেনা শিশু-বাচ্চারাও। এই সামাজিক অবক্ষয়ের মহামারি যেন থামার নয়। একটি ধর্ষণ হওয়ার পর এর তদন্ত ও বিচার করতে করতে আরো কয়েক ডজন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। যেন এ সমাজ এক নব্য জাহেলি যুগে পদার্পণ করেছে। সমাজটা দিন দিন দুর্গন্ধময় হয়ে যাচ্ছে। প্রজন্ম এ থেকে কি শিক্ষা পাবে।
এসব দেখে বিবেকে প্রশ্ন জাগে। আমরা কোথায় বাস করছি? আমরা কি আসলে সভ্য মানুষ? আমরা কি এটা বন্ধ করতে পারিনা? আমরা প্রজন্মকে কিভাবে মুখ দেখাব? তারা এমন সমাজ ব্যবস্থা থেকে কি শিক্ষা নিবে?
একটি ধর্ষনের ঘটনা ঘটলেই শুরু হয়ে যায় একে অন্যকে দোষারোপ করা। কিছু মানুষ নিজের অজান্তে ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে নেয়।কোথায় এর বিচারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলবে সমস্বরে, না, এসব না করে বলা শুরু হয়ে যায়, ধর্ষণ তো হবেই; কারণ মেয়েটা তো পর্দা করেনি। পর্দা করলেও তেমন খাটি পর্দা করেনি। এগুলো কোনো কথা? আপনার এমন মন্তব্যের কারণে ধর্ষক লম্পটরা আরো ধর্ষণ করতে সাহস পাচ্ছে। আপনার কি একবারও এমন টি মনে হয় না?
ধর্ষণের জন্য যদি শুধু পোষাক দায়ী হয় তবে তো অমুসলিম মেয়েদেরকেও পর্দা করতে হবে। তাহলে শিশুরা কেন ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে? মাদ্রাসার পর্দা করা মেয়েটা কেন ধর্ষিতা হচ্ছে? মক্তবের বাচ্চাটা কেন বলৎকার হচ্ছে? এগুলো সব কি পোষাকের জন্য হচ্ছে? না, আপনার চিন্তায় হয়ত কোথাও সমস্যা হচ্ছে। তবে আমি বিশ্বাস করি মহান আল্লাহ পর্দা ফরজ করছেন।পর্দায় রয়েছে মানব জাতির মঙ্গল। তবে সেটা শুধু নারীর জন্য নয়। আপনি আমি যারা পুরুষ আছি, আমাদেরও পর্দা করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন আমরা যেন চোখ অবনত রাখি। যদি এটা মানতে পারি তবে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। এখানে ধর্ষণ হওয়া কল্পনাও করা যায় না। যেখানে নারীর প্রতি কুচিন্তা নিয়ে দৃষ্টি দেয়া বৈধ নয় সেখানে ধর্ষণের প্রশ্নও আসে না। এই বাণী মহান রব প্রায় ১৫শত বছর আগে দিয়েছেন অথচ আমরা এখনও শিখতে পারলাম না। শুধু জেনেই গেলাম। কাজে পরিণত করা আর হলো না।
আমরা সবাই এটা পারিনা। হয়ত পারবেও না, এটা আমাদের স্বভাব। সবাই ভালো হয়ে যাবে এ আশা করাও কল্পনা প্রসূত। মহান রব আমাদেরকে বলেছেন, তোমরা অন্যের সম্পদ চুরি করো না। কিন্তু আমাদেরর কেউ কেউ করে। তোমরা দুর্বলদের উপর অত্যাচার করো না অথচ কেউ কেউ করে। তোমরা মিথ্যা বলো না তবুও আমাদেরর মাঝে মিথ্যাবাদী আছে। আমাদের সব খারাপ কাজ করতে রব নিষেধ করেছেন তবুও আমরা করেই যাচ্ছি। এগুলো কেন আমরা করি? এর কারণ কখনো ভেবেছেন?
আসল ব্যপার হচ্ছে আমরা অন্যায় করি, করব, অন্যায় করা আমাদের স্বভাব। তাই আল্লাহ তায়ালা উপদেশের সাথে সাথে শাস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন। যদি এমন অপরাধ কর তবে তুমি এরকম শাস্তি প্রাপ্ত হবে। এবং পরকালেও তোমার জন্য অমুক শাস্তি বরাদ্দ থাকবে।
তাহলে এবার বলুন তো, ধর্ষণের জন্য কি শুধু পোষাক দায়ী? না, না, শাস্তি বা বিচার না হওয়াটাও দায়ী। মানুষ অপরাধ করার সময় চিন্তা করে। যদি আমি এই অপরাধটা করি তবে আমার কি শাস্তি হতে পারে? বা সমাজে আমার সম্মান হারাবে কিনা? যখন দেখে আমার আছে ক্ষমতা। আমার আছে রাজনীতিবিদ বড় ভাই বা রাজনৈতিক শক্তি। আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। তখন অপরাধ করার শক্তি ও সাহস পায়। এদেশে যত অপরাধ হচ্ছে, প্রতিটা অপরাধের কারণ খুঁজে দেখুন। ক্ষমতা আর বিচার না হওয়াটা প্রধান কারণ।তবে নিজ নিজ ধর্ম না মানলে বিপর্যয় দেখা দিবে এটা চিরো সত্য। ধর্ম না থাকলে মানুষ অসভ্য জানোয়ারে পরিণত হতো। যার ভেতর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, সে ধর্ষণের চেয়ে জঘন্য পাপ অনায়েসে করতে পারবে। এসব অপরাধীদের সোজা পথে আনার জন্যই শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অপরাধীরা যখন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে তখন অপরাধ করতে গেলে একশতবার ভাববে।ফলে অপরাধ কমে যাবে।মুক্তি পাবে সমাজ। পশুগুলো ফিরে পাবে মানবরূপ।
তাই একচেটিয়া পোষাককে দায়ী করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনি আপনার বোনকে না হয় পর্দা করালেন কিন্তু ইন্টারনেটকে কিভাবে পর্দা করাবেন।অশ্লীলতা ছড়িয়ে আছে আমাদের চার পাশে। তাই আগে নিজেকে বদলান। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করুণ। নিজের চিন্তার বিকাশ ঘটান। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করুন নিজের হৃদয় পাড়াকে।
হ্যাঁ, অশ্লীলতা বন্ধ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করুণ কিন্তু নিজের দোষ আসে পাশে কারো উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।
সে জন্য দরকার নৈতিক শিক্ষা।শুধু বই পুস্তক পড়ে বড় শিক্ষিত আর পণ্ডিত হলে শিক্ষিত বলা যায় না। আপনার ভিতরে যদি শিক্ষার আলো প্রবেশ না করে তবে আপনার এই শিক্ষার কোনো মূল্য নেই। শিক্ষা গ্রহণের আগে যেমন আপনার ভেতরটা আঁধারে আচ্ছন্ন ছিল, শিক্ষালাভের পরেও যদি আঁধারে ঢাকা রয়ে যায়।তবে কি লাভ হবে এতো সব ডক্টরেট ডিগ্রি আর পোষাকধারী আলেম হয়ে? শিক্ষিত হয়ে তো
আপনি আরও আঁধারে নিমজ্জিত হয়ে গেলেন।কারণ শিক্ষা গ্রহণের আগে আপনার দ্বারা যতটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, এখন তা হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষক নামের নরপিশাচদের থাবাও আমরা দেখেছি। শিক্ষিত আমলাদের চুরির কথাও আমরা জানি। এদের ভেতরে শিক্ষার আলো প্রবেশ করেনি।
তাই শুধু শিক্ষা গ্রহণ করলে চলবে না, শিক্ষার আলোয় হৃদয়টা আলোকিত করতে হবে। যখন আপনার ভেতরে আলো আসবে। তখন আপনি শালীন হবেন।আপনার ভেতরে ভদ্রতা প্রবেশ করবে।আপনার ভেতর মানুষের অধিকার জ্ঞান প্রবেশ করবে। মানুষের কষ্টে আপনি কষ্ট পাবেন। আপনি নিজের ধর্মের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে আপনার মন নাড়া দিবে। অন্যকে কষ্ট দিয়ে আপনি শান্তি পাবেন না। অন্যকে অধিকার হারা করে আপনি ঘুমাতে পারবেন না। আপনার বিবেক আপনাকে অনবরত শাস্তি দিবে। এটাই শিক্ষার আলো। এটাই আত্মোপলদ্ধি এবং নিজের পরিচয়।
নৈতিক শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে পরিবার। পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষা বঞ্চিত হলে আর কোথাও তার পূর্ণতা আসেনা। তাই পরিবারকে এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। আর যারা এতসব করার পরেও অপরাধ করবে, তাদের জন্য দ্রুত উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সব অপরাধ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। অবশেষে বলতে চাই, অন্যায়ের দ্রুত বিচার চাই।
লেখক,
মোহাম্মাদ ফখরুল ইসলাম
কোন মন্তব্য নেই