জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসলাম কী বলে?
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসলাম কী বলে?
সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ একটি সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। এটি একটি রাষ্ট্রের উন্নতির অন্তরায়। সন্ত্রাসবাদ বোঝাতে পবিত্র কুরআনে মুফসিদুন শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Terrorism (টেরোরিজম)। যারা অনৈতিক ও অবৈধভাবে সামাজে ত্রাস সৃষ্টি করে সামাজিক ও জাতীয় জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে তাদেরকে বলা হয় সন্ত্রাসী। আরবিতে বলা হয় মুফসিদুন (مفسدون) আর ইংরেজিতে Terrorist বলা হয়। সন্ত্রাসীদের নেই কোনো ধর্ম, নেই মানবতাবোধ। সর্বত্র ত্রাস সৃষ্টি করে শান্তি শৃঙখলা বিনষ্ট করাই তাদের কাজ।
মূলত অন্যের মতামতকে সম্মান না দেয়ার প্রবণতা ধীরে ধীরে সন্ত্রাসবাদে রুপ নেয়। তাছাড়া নৈতিক শিক্ষার অভাব ও ধর্মের অপব্যাখ্যা সন্ত্রাস সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
পবিত্র কুরআনে সন্ত্রাসীদের মনোভাব প্রকাশ করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, "তাদেরকে (সন্ত্রাসীদেরকে) যখন বলা হয় তোমরা জমিনে ত্রাস বা বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে আমরা তো শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। আল্লাহ শান্তিকামীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাবধান! তারাই ত্রাস ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী অথচ তারা উপলব্ধি করেনা। (সূরা বাক্বারা, আয়াত-১১)
ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে হত্যা,খুন,ধর্ষণ, দুর্নীতি ইত্যাদি অন্যায় অনাচারে জগত কালো আঁধারে ঢাকা ছিল। মানবতার মুক্তির বার্তা নিয়ে আসেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বিশ্বময় শান্তির বার্তা প্রচার করেন।
তিনি ঘোষণা করলেন, মানুষ হত্যা মহাপাপ। এমন কি মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, "তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি অনুগ্রহ কর; তাহলে আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।"
তিনি আরো বলেন, "যে মানুষের প্রতি দয়া করেনা; আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।"
মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন।
"মানুষ হত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া, কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল। (সূরা আল-মায়িদা) আয়াত: ৩২
পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াত অনুযায়ী প্রতিয়মান হয় যে,
বিনা অপরাধে একজন মানুষকে হত্যা করার অর্থ হলো, পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে হত্যা করার সমান।আর একজন মানুষের প্রাণ বাঁচানোর অর্থ হচ্ছে, সমস্ত মানুষের প্রাণ বাঁচানোর সমান।
আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন সব মহা বাণী শুনে, মানুষ অন্যায়ের পথ ছেড়ে ইসলামের ছায়াতলে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মানুষের আকৃতিতে যারা পশুত্ব বরণ করেছিল তারাও ফিরে পেল তাদের মানবরূপ।
বিনা অপরাধে ইসলাম কখনো হত্যা সমর্থন করেনা।ইসলাম পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "জমিনে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার পরে উহাতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করোনা " ( সূরা আরাফ-- ৫৬)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
ঝগড়া ফাসাদ, দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। (সূরা বাক্বারা--১৯১)
এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন কোনো মুসলিম সন্ত্রাসবাদ তো দূরের কথা, কোথাও ঝগড়া ফাসাদ সৃষ্টি হবে এমন কাজও করতে পারবেনা।
এভাবে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের কথা বর্ণনা করেছেন। যারা এমন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হবে তাদের পরকালীন কঠিন শাস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন।
ইসলাম পৃথিবী থেকে সন্তাসবাদ নির্মূল করতে জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করে। তাই তো বিশ্বনবী (সাঃ) নিজের দেশ ও সমাজকে রক্ষা করতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামরিক বিভাগ গড়ে তোলেছিলেন। অনেকে জিহাদ আর মুফসিদুন বা সন্ত্রাসবাদকে একসাথে গুলিয়ে ফেলছেন। জিহাদ সভ্য সমাজের প্রতিটি রাষ্ট্র করে যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে দেশকে সন্ত্রাসের কালো থাবা থেকে রক্ষা করার জন্য। সামরিক বিভাগ ছাড়া আধুনিক ও সভ্যতার যুগে কোনো রাষ্ট্রগঠন কল্পনা করা যায় না। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামী রাষ্ট্রে সামরিক বিভাগ বা জিহাদ থাকবে না, এটা হতে পারে না।
দেশ ও জাতির শান্তি রক্ষা করার জন্য দেশে দেশে যুদ্ধ বিভাগ বা সামরিক বিভাগ গঠন করা হয়। এই সামরিক বিভাগের কাজকে আরবিতে বলা হয় জিহাদ। জিহাদ অর্থ সন্ত্রাসীর কর্মকাণ্ড করা নয়। জিহাদের নামে যারা সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত তারা কখনো ইসলামের প্রকৃত অনুসারী হতে পারেনা। তারা সন্ত্রাসী। তাদের কোন ধর্ম নেই।এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের অনেক আয়াতে আদেশ দিয়েছেন।
ইসলাম কোনোভাবেই কারো উপাসনালয়ে আক্রমণ করাকে বৈধতা দেয়নি। অন্য ধর্মের কারো জীবন বিপন্ন হোক এমন কাজের অনুমতি দেয়না।ইসলাম ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছে। বরং ইসলামিক দেশে অন্য ধর্মের লোকদের জানমালের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়ার আদেশ দিয়েছে। অন্য ধর্মের ক্ষতি করা বা লোকদের হত্যা করার কোনো সুযোগ ইসলাম রাখেনি।
প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তার উপাসনালয়কে পবিত্র এবং নিরাপদ মনে করে। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন সেখানে গিয়ে তার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেন। এমন বিশ্বাসের যায়গায় যারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে, তারা আর যাই হোক মানুষ নয়। তারা মানুষরুপে বড্ড অমানুষ।
প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে এক ধর্মের লোক আরেক ধর্মের উপাসনালয়ে যদি এমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো অব্যাহত রাখে, তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন মানব সভ্যাতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা করে পৃথিবী মানব শূন্য হয়ে যাবে। এটা কোনো ধর্মের আদেশ হতে পারে না। পৃথিবীর কোনো ধর্ম যদি এমন কাজের অনুমতি দিয়ে থাকে তবে সেটা কোনো ধর্ম নয়।সে ধর্ম পরিত্যাজ্য। এমন ধর্মের মানব সমাজে স্থান নেই। সেটা নর্দমায় নিক্ষিপ্ত করা হোক।
ইসলামে কোনো সন্ত্রাসীর স্থান নেই।তাই ইসলামকে ভালোভাবে জানুন।ইসলাম একটি সুমহান ধর্ম মত। ইসলাম উদার হতে শিক্ষা দেয়। ইসলাম অন্যের আদর্শ ও মতামতকে সম্মান দিতে শিক্ষা দেয়।ইসলাম শুধু নিজেকে বাঁচাতে শেখায় না; সবাইকে নিয়ে বাঁচতে শেখায়। ইসলামে নেই কোনো উগ্রবাদের ঠাই। ইসলাম শান্তির পথ দেখায়।আত্মতৃপ্তি ও প্রশান্তির অপর নাম ইসলাম।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক।
ট্যাগস
Thank you .
উত্তরমুছুন