সহজ আরবি তারকিব শিক্ষা : প্রথম পর্ব

সহজ আরবি তারকিব শিক্ষা  : প্রথম পর্ব



আরবি ব্যাকরণের ২ টি অংশ আছে। তারকিব আরবি ব্যাকরণের নাহু অংশে আলোচনা করা হয়। আরবি ভাষার বাক্য গঠনে তারকিব অনেক গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়। এখানে আরবি তারকিব শিক্ষার নিয়ম আলোচনা করা হয়েছে।





আরবি ব্যাকরণে তারকিব কাকে বলে? তারকিবের প্রয়োজনীয়তা কি? সহজে তারকিব করার কিছু নিয়ম ও তারকিবের পরিভাষা উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো।




আস্সালামু আলাইকুম!

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আশা করি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। প্রথমে আপনাকে আমাদের আরবি ব্যাকরণ শিক্ষা কোর্সের আসরে স্বাগতম!

 আলহামদুলিল্লাহ ইতোমধ্যে আমরা আরবি ২য় পত্র মিজানুস সরফ বা ইলমুস সরফ নিয়ে কিছুটা আলোচনা করেছি। ইলমুন নাহু নিয়েও আমাদের পর্যায়ক্রমে আলোচনা চলছে।

সেই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা নতুন একটি পর্ব চালু করতে যাচ্ছি। তা হলো আরবি তারকিব শিক্ষা বা আরবি বাক্য গঠন পর্ব। এখানে আমরা আরবি বাক্য গঠন নিয়ে বিশ্লেষণ করব।

অর্থাৎ কীভবে সহজে আরবি তারকিব করা যায় তা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। যদি আপনাদের উৎসাহ এবং সহযোগিতা পাই তবে এটা আমার জন্য আরও সহজ হবে। আশা করি সাথে থাকবেন।



কিভাবে আরবিতে হাজারো বাক্য গঠন করবেন তা জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।



আরবি ব্যাকরণ তথা ইলমে নাহুর ভাষায় তারকিব কাকে বলে?


প্রথমে আমাদের জানা দরকার আরবি তারকিবের শাব্দিক পরিচয়।

তারকিব:- تـركــيب

তারকীব শব্দের অর্থ গঠন করা। অর্থাৎ বাক্য গঠনের প্রক্রিয়াকে আরবিতে তারকিব বলা হয়।

অন্যকথায় বলা যায়, একটি বাক্য কোন কোন কালিমা বা শব্দ নিয়ে গঠিত হয়েছে এবং বাক্যটির অর্থ কেমন হবে এসব বিষয় বিশ্লেষণ করাকে আরবি গ্রামারের পরিভাষায় তারকিব বলা হয়।

যেমন- جَـاءَ زَيـْد জা'আ যাইদুন অর্থ যায়েদ এলো।

এখানে জা'আ َجَاء  ক্রিয়া আর যাইদুন শব্দটি ইসম বা বিশেষ্য হয়ে ক্রিয়াটির কর্তা হিসেবে এসেছে। উক্ত ক্রিয়া আর কর্তা মিলে একটি ক্রিয়াবাচক বাক্য গঠিত হয়েছে।

 সুতরাং এখানে যাইদ লোকটির মাধ্যমে কাজটি হয়েছে তাই তাকে কর্তা হিসেবে অর্থ করতে হবে। অর্থ হবে যায়েদ এলো।


আবার, المسجدٌ بيتُ الله  আল-মাসজিদু বাইতুল্লাহ। অর্থ মসজিদ আল্লাহর ঘর।

এখানে, মাসজিদ শব্দটি মুবতাদা কারণ মাসজিদ শব্দটির উপর অন্য শব্দের অর্থ নির্ভর করছে। এটা মারফুআত এর একটি প্রকার।

 আর বাইতুন শব্দটি মুদাফ অর্থাৎ যে শব্দকে অন্য শব্দের সাথে সম্বন্ধ করা হয় তাকে মুদাফ বলে। আর আল্লাহ শব্দটি মুদাফ ইলাইহি অর্থাৎ যার সাথে অন্য শব্দ সম্বন্ধ বা যুক্ত করা হয় তাকে বলা হয়।

মুদাফ মুদাফ ইলাইহি মিলে হয়েছে খবর। কারণ আল্লাহর কিতাব এট একটি সংবাদ যা মু্বতাদার সমন্বয়ে পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে পারে।

মুদাফ মুদাফ ইলাইহ এর অর্থ করার সময় সাধারণত মাঝে র বা এর হয়।


সুতারাং অর্থ হবে,  মসজিদ আল্লাহর ঘর।




প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সহজে তারকিব করার কয়েকটি নিয়ম জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
সহজ তারকিব শিক্ষা।



তারকীব শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা :-



আরবি ভাষায় বাক্য তৈরি করা শেখার জন্য তারকিব শেখা অতি জরুরী। তারকীব মানে হচ্ছে গঠন করা। যদি আপনি বাক্য গঠনের নিয়ম না জানেন এবং সেই বাক্যের অর্থ কেমন হবে তা না জানেন তবে আপনি আরবি ভাষায় ভালো দক্ষ হতে পারবেন না। আপনার ভিত্তি দূর্বল থাকবে। নিজের মত করে আরবিতে ভাব প্রকাশের জন্য তারকীব শেখার বিকল্প নেই। যদি আপনি তারকীব না পারেন তবে দেখা যাবো অর্থ তুলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলছেন।


 কোনটা মাউসুফের অর্থ, কোন টা সিফাতের অর্থ, কোনটা হাল যুল হালের অর্থ, কোনটা মুবতাদা খবর এর অর্থ। ইত্যাদি অনেকগুলো পরিভাষা আছে যেগুলো আপনি ভালো জানবেন না। তাই আরবি ভালোভাবে শেখার জন্য তারকীব আপনাকে শিখতে হবেই। অন্যথায় আপনাকে অনুবাদ মুখস্ত করে যেতে হবে। কেন এমন অর্থ হচ্ছে তা জানতে পারবেন না। তাই আমি বলব, আপনি যদি আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে চান তবে তারকীব করা কৌশল ও তারকীবের পরিভাষাগুলো রপ্ত করতে সচেষ্ট হবেন।



এবার আমরা জানব কীভাবে আরবিতে সহজে তারকীব করা শিখবেন। অর্থাৎ তারকীব করার কিছু পরিভাষা উদাহরণসহ আমরা এখন আলোচনা করব।


তারকিব করার পদ্ধতি ও তারকীব এর কিছু পরিভাষা।

তারকিব করার আগে আমাদের তারকিবের কিছু পরিভাষার নাম জানা দরকার অন্যথায় তারকিব করার সময় এদের পরিচয় জানতে হবে তাই আগেই জেনে নেওয়া ভালো। তাহলে চলুন আগে তারকিবের কিছু টার্ম জেনে নেই।।

খবর (خبر)  কাকে বলে?

১) খবর (خبر) যার মাধ্যমে কোনো সংবাদ দেওয়া হয় তাকে খবর বলে।
যেমন ; خالد طالب
 খালেদ একজন ছাত্র। এখানে খালিদ মুবতাদা আর ছাত্র শব্দটি খবর।

মুবতাদা (مــبتدأ)  কাকে বলে?


২) মুবতাদা (مــبتدأ) যার সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হয় তাকে মুবতাদা বলে।
যেমন ; خالد طالب
 খালেদ একজন ছাত্র।
এখানে খালিদ শব্দটি মুবতাদা।

মুসনাদ ইলাহি (مـسند إلـيه) কাকে বলে?


৩)মুসনাদ ইলাহি (مـسند إلـيه) যার উপর হুকুম দেওয়া হয় তাকে মুসনাদ ইলাহি বলে।
যেমন "زَيد عالم
যায়েদ একজন আলেম। এখানে যায়েদ শব্দটি মুসনাদ ইলাইহি।

মুসনাদ (مـسند) কাকে বলে?

৪)মুসনাদ (مـسند) যার দ্বারা হুকুম দেওয়া হয় তাকে মুসনাদ বলে।
যেমন "زَيد عالم
যায়েদ একজন আলেম।
এখানে আলিম শব্দটি মুসনাদ।

মাউসুফ (مو صوف) কাকে বলে?

৫)মাউসুফ (مو صوف) যার দোষ গুণ বর্ণনা করা হয় তাকে মাউসুফ বলে।
যেমন ; ذالك القلم
নতুন কলমটি।
এখানে কলম শব্দটি মাউসুফ কারন কলমের গুণ বর্ণনা করা হয়েছে।

সিফাত(صفة) কাকে বলে?

৬)সিফাত(صفة) যার দ্বারা দোষ গুণ বর্ণনা করা হয় তাকে সিফাত বলে।
যেমন ; ذالك القلم
নতুন কলমটি।
এখানে নতুন' শব্দটি সিফাত কারন " নতুন " বা জাদিদ " শব্দটির মাধ্যমে কলম শব্দটির গুণ প্রকাশ করা হয়েছে।


মাউসুফ সিফাত কাকে বলে? মাউসুফ সিফাত এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে  আমাদের Fakhrul Academy নামক চ্যানেল থেকে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।



মুদাফ (مضاف) কাকে বলে?

৭) মুদাফ (مضاف) যে শব্দকে অন্য শব্দের সাথে যুক্ত করা হয় তাকে মুদাফ বলে।
যেমন, كتاب الله
 কিতাবুল্ললাহি
অর্থ,  আল্লাহর কিতাব
এখানে কিতাব মুদাফ কারন কিতাব শব্দটি আল্লাহ শব্দের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।

মুদাফ ইলাইহি (مضاف إلیه) কাকে বলে?

৮) মুদাফ ইলাইহি (مضاف إلیه) কোনো শব্দকে যে শব্দের সাথে যুক্ত করা হয় তাকে মুদাফ ইলাইহি বলে।
যেমন, كتاب الله
 কিতাবুল্ললাহি
অর্থ,  আল্লাহর কিতাব
এখানে আল্লাহ শব্দটি মুদাফ ইলাইহি, কারন আল্লাহ শব্দটির সাথে কিতাব শব্দটিকে যুক্ত করা হয়েছে।

ইসমে ইশারা (الإسم الإشاره) কাকে বলে?

৯) ইসমে ইশারা (الإسم الإشاره) যার দ্বারা ইশারা বা ইংগিত করা হয় তাকে ইসমে ইশারা বলে।
যেমন, ذالک قلم
"যালিকা কলামুন"
উহা একটি কলম,
এখানে "যালিকা " শব্দটি ইসমে ইশারা। এর দ্বারা কলমের দিকে ইশারা করা হয়েছে।

 মুশারুন ইলাইহি (مشار إلیه) কাকে বলে?

১০) মুশারুন ইলাইহি (مشار إلیه) যে শব্দের দিকে ইশারা করা হয় সে শব্দটিকে বলা হয় মুশারুন ইলাইহি।
যেমন, ذالک قلم
"যালিকা কলামুন"
উহা একটি কলম,
এখানে কলম শব্দটি মুশারুন ইলাইহি, কারন যালিকা ইসমে ইশারা দিয়ে কলম শব্দটিকে ইশারা করা হয়েছে।

ফেয়েল (فِعل) কাকে বলে?

১০) ফেয়েল (فِعل) কোনো কাজ বা ক্রিয়াকে ফেয়েল বলে।
যেনন ; ذَهَبَ خالِد
" যাহাবা খালিদুন"
অর্থ, খালিদ গেল।
এখানে গেল বা "যাহাবা" শব্দটি ফেয়েল বা ক্রিয়া।

ফায়েল (فاعل) কাকে বলে?

১২)ফায়েল (فاعل) ফেয়েল এর কর্তাকে ফায়েল বলে অর্থাৎ যার দ্বারা কাজ সম্পাদিত হয় তাকে ফায়েল বলে।
যেনন ; ذَهَبَ خالِد
" যাহাবা খালিদুন"
অর্থ, খালিদ গেল।
এখানে খালিদুন শব্দটি ফায়েল কারন যাওয়া কাজটি খালেদ এর দ্বারা সম্পাদিত হয়েছে।



তারকিবের আরো অনেক পরিভাষা আছে। আজকের পর্ব এখানেই সমাপ্ত করছি। পরবর্তী পর্বে ইন শা আল্লাহ বাকি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে আপাদের মন্তব্য আশা করছি। লেখা বুঝতে আপনাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা বা কীভাবে লিখলে আরো ভালো হবে তা জানালে খুশি হব। কেননা এই চেষ্টা তো আপনাদের জন্যই। যদি আপনারাই না বুঝেন তবে সবই ব্যর্থ হবে।


তাহলে এখানেই বিদাই নিচ্ছি।
আল্লাহ হাফেয।



আরবি ২য় পত্র ইলমে নাহু বা ইলমুন নাহু




FAQS:

সহজ আরবি তারকিব শিক্ষা, 
তারকিব শিক্ষা,
আরবি তারকিব,
তারকিব কাকে বলে,
তারকিব করার কিছু নিয়ম,
তারকীব শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা,



১৪টি মন্তব্য:

  1. মাশাল্লাহ খুব ভালো লাগলো।
    আশা করি আরো আধুনিকায়ন করবেন।

    উত্তরমুছুন
  2. বুঝতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ্ এগিয়ে জান।

    উত্তরমুছুন
  3. আমক বুঝতে পেরেছি

    উত্তরমুছুন
  4. সব টি কাছে মাশাল্লাহ তবে মাওসুফ সিফাতের উদাহরণ এর মধ্যে কিছুটা সমস্যায় রয়েছে আপনি দেখবেন

    উত্তরমুছুন

Barcin থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.