বালাগাত কাকে বলে? বালাগাত কত প্রকার ও কি কি? এসো বালাগাত শিখি ব্যাখ্যাসহ পার্ট-১

বালাগাত কাকে বলে? বালাগাত কত প্রকার ও কি কি? এসো বালাগাত শিখি ব্যাখ্যাসহ পার্ট-১

বালাগাত কাকে বলে? বালাগাতের উদাহরণ, বালাগাত কত প্রকার কি কি? আরবি বালাগাত, বালাত শিখু, এসো বালাগাত শিখি pdf
বালাগাতের পরিচয়

আসসালামু আলাইকুম। 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।


প্রথমে আমরা জানব বালাগাত কাকে বলে?


যে নিয়ম কানূন জানলে মনের ভাব বিশুদ্ধ ও সুন্দর ভাষায় অবস্থার চাহিদা অনুযায়ী বা স্থান কাল পাত্রের উপযোগী করে প্রকাশ করা যায় তাকে ইলমুল বালাগাহ বলা হয়।

আরবি বালাগাত কত প্রকার ও কি কি?


আরবি বালাগাত তিন প্রকার


১)ইলমুল মায়ানী
যে সকল নিয়ম কানূন অনুসরণ করলে মানুষের যাবতীয় কথা মুক্তাদা হাল অর্থাৎ স্থান কাল পাত্রের অনুযায়ী হয় তাকে ইলমুল মায়ানী বলে।

২)ইলমুল বায়ান
যে সকল নিয়ম কানূন জানলে একটি ভাবকে বিভিন্নরুপে প্রকাশ করা যায় তাকে ইলমুল বয়ান বলা হয়। 
৩) ইলমুল বাদী
যে নিয়ম কানূন জানলে বালাগাতপূর্ণ বাক্য বা মুক্তাদা হাল অনুযায়ী প্রকাশিত বাক্যের শব্দগত ও অর্থগত সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। 
  

এখানে আমরা কবিতার লাইন থেকে  ‘উজূহ বালাগিয়্যাহ’ (وجوه بلاغية) বের করব। অর্থাৎ লাইনটিতে বালাগাতের কোন কোন বিষয় পাওয়া যায় তা নির্ণয় করা হবে। তবে এখানে কিছু কবিতার নির্ধারিত লাইনের ব্যাখ্যা করা হয়েছে নিম্নে আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করি।




বালাগাত পূর্ণ একটি কবিতার লাইন,

·        ألا أيها الليل الطويل ألا انجلي بصبح وما الإصباح منك بأمثل
পংক্তিটির অর্থ, ‘হে দীর্ঘ রাত! তুমি চলে যাও, সকাল নিয়ে আসো। যদিও সকাল তোমার থেকে উত্তম হবে না।’
কবির রাত যেন কাটতেই চাইছে না, দুঃখে-বেদনায়-হতাশায়-বিরক্তিতে। তাই তিনি চাচ্ছেন সকালের আগমন ঘটুক, যাতে সকল কষ্ট ঘুচে যায়। পরক্ষণেই হতাশা তাকে ঘিরে ধরছে আবারও। তার মনে হচ্ছে, সকাল এলেও বা কী? সকালের সাথে রাতের তো তেমন কোনো তফাৎ নেই।
-   পংক্তিটিতেانجلي এই আমরের সীগাহটি ব্যবহৃত হয়েছে। আমরের সীগাহর মূল অর্থ আদেশ প্রদান। কিন্তু এখানে কবি মূল অর্থের বাহিরে ভিন্নার্থ নিয়েছে। আর তা হলো— تمني তথা আশা করা। তিনি রাতকে আদেশ করার ক্ষমতা রাখেন না, তবু রাতের কাছে আশা রাখছেন; যাতে রাতটা কেটে উদিত হয় প্রভাতের আলো।
-   পংক্তিটিতে ألا শব্দটি দ্বারা বোঝা যায়, শ্রোতা (রাত) এখানে উদাসীন। উদাসীন শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ألا শব্দটির দ্বিরুক্তিও করা হয়েছে।ألا এর ব্যবহার تنبيه তথা সচেতন করার অভিপ্রায়ে।
-   পংক্তিটিতে بأمثل শব্দটিতে অতিরিক্ত একটি باء এসেছে। ইতঃপূর্বে ما গত হয়েছে, যেটি ما المشبهة بليس অর্থাৎ এমন ما  যেটি ليس এর সাথে সাদৃশ্য রাখে। এমন ما এর খবরে যখন ب যুক্ত হয় তখন তা ‘তাকীদ’-এর ফায়দা প্রদান করে।



আরেকটি বালাগাত মিশ্রিত পংক্তি হচ্ছে…
·        يا ليل طل، يا يوم زل* يا صبح قف لا تطلع
পংক্তিটির অর্থ, ‘হে রাত! তুমি দীর্ঘায়িত হও, হে দিন! তুমি চলে যাও। হে সকাল! তুমি থেমে যাও, উদিত হয়ো না।’
কবি বেশ ভালো রাত কাটাচ্ছেন। তিনি চাইছেন না এ রাতের সমাপ্তি ঘটুক। তাই রাত দীর্ঘ হোক— এমন আশা করছেন। দিনের আগমন, প্রভাতের সূচনা— এগুলো তিনি থামিয়ে দিতে চান। তাই নিষেধ করছেন, যাতে তারা না আসতে পারে।
-   পংক্তিটিতে لا تطلع একটি নিষেধসূচক ক্রিয়া তথা ‘নাহী’। এমন ক্রিয়া সাধারণত ব্যবহার করা হয় কোনো কাজ করতে শ্রোতাকে নিষেধ করার জন্য। কিন্তু এখানে মূল অর্থের বাহিরে গিয়ে ভিন্নার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর তা হলো, التمني তথা আশা করা। কবি আশা করছেন যে সকাল উঠবে না। এমন আশা জায়গা থেকে তিনি নিষেধ করছেন সকালকে।
-   পংক্তিটিতে হরফে নেদা يا ব্যবহৃত হয়েছে। এটি ব্যবহার করা হয় দূরবর্তী কিছু বোঝানোর জন্য। কিন্তু এখানে শ্রোতা (সকাল)-র ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, যা খুবই নিকটে। এর কারণ, দূরবর্তী কিছুর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত يا কখনো নিকটের কিছুর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। আর তা করা হয় যদি শ্রোতা সম্মানিত কিছু হয়ে থাকে। এ পংক্তিতে শ্রোতাকে সম্মানিত কিছু কল্পনা করে দূরবর্তী অর্থ বোঝায় এমন হরফে নেদা ব্যবহার করা হয়েছে।
-   পংক্তিটিতে طل এবং زل দুটি শব্দের মাঝে جناس ناقص হয়েছে। جناس বলতে বোঝানো হয় দুটি শব্দের মাঝে চারটি বিষয়ে মিল হওয়া। হরফসমূহের ধরণ, সংখ্যা, হরকত-সাকিন ও ধারাবাহিকতা। চারটি বিষয়ে মিললে جناس تام আর কোনো একটি না মিললে جناس ناقص বলা হয়। এখানে শব্দ দুটির মাঝে একটি হরফ বাদে বাকি সব কিছু মিলেছে। তাই বলা যায়, এখানে جناس ناقص বা جناس غير تام হয়েছে।





·        قال لي كيف أنت قلت عليل* سهر دائم وحزن طويل
পংক্তির অর্থ, ‘সে আমাকে বলল, ‘আপনি কেমন আছেন?’ আমি বললাম, ‘অসুস্থ, নিরন্তর রাতজাগা আর দীর্ঘ শোকে পতিত।’
কবির কোনো এক শুভাকাঙ্ক্ষী তার খবর নিতে এসেছেন। জিজ্ঞাসা করলেন তার কী অবস্থা। কবি খুবই বিষণ্ন। রোগা শরীরে কেবল এ উত্তর-ই দিলেন, ‘অসুস্থ’। তারপর যোগ করলেন, ‘সর্বদা রাত জাগা আর দীর্ঘ শোকের মাঝে আছি আমি।’ এখানে কবির বিষণ্নতা ও অসুস্থতার চরম প্রকাশ ঘটেছে।
-   পংক্তিটিতে ‘মুসনাদ ইলাইহি’ তথা দ্বমীরে أنا হযফ করা হয়েছে। এর কারণ— ضيق المقام عن إطالة الكلام بسبب تضجر أو توجع (বিরক্তি বা অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ কথা বলার মত অবস্থা না থাকা)। কবি অসুস্থ, তবে তিনি বলেন নি— ‘আমি অসুস্থ’। একটা শব্দ ‘অসুস্থ’ বলে তিনি ক্ষান্ত হয়েছেন। কেননা তিনি রোগে আক্রান্ত। বেশি কথা বলার মত অবস্থা তার নেই।


·        وما المال والأهلون إلا ودائع* ولا بد يوما أن ترد الودائع
পংক্তির অর্থ, ‘ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন তো আমানত। একদিন এ আমানত ফিরিয়ে দিতে হবেই।’
জীবন যে কতটা তুচ্ছ ও সামান্য, তা অনুভব করেছেন কবি। জীবনে যা কিছু আছে, তা কবির নিজের নয়। সব-ই আল্লাহর দান, তার দেওয়া আমানত। এগুলো তিনি-ই দিয়েছেন, আবার তিনি-ই ফেরত নিবেন।
-   পংক্তিটিতে কবি আমানত ফিরিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কারা ফিরিয়ে দিবে সেটা বলেন নি। মূলত এখানে হওয়ার কথা, يرد الناس الودائع তথা লোকে তার আমানত ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু তিনি সেটা ‘মাজহূল’ ব্যবহার করে চলে গেছেন। এর কারণ হলো— المحافظة على قافية তথা ক্বাফিয়া (অন্ত্যমিল) রক্ষা করা। এখানে যদি ক্রিয়ার কর্তা الناس উল্লেখ করা হয় তাহলে الودائع শব্দটির শেষে ‘নাসব’ তথা যবর হবে। এতে ক্বাফিয়া বা অন্ত্যমিলের ব্যাঘাত ঘটবে। সে কারণে তিনি তা হযফ করেছেন, মুছে দিয়েছেন।
-   পংক্তিটিতে جناس تام হয়েছে। কেননা ودائع শব্দটি উভয় অংশের শেষে এসেছে।




·        على أنني راض بأن أحمل الهوى* وأخلص منه لا علي ولا ليا
পংক্তির অর্থ, ‘আমি এতে খুশি যে আমি ভালোবেসে যাব এবং সে ভালোবাসা থেকে বেরিয়ে আসবো, এমন অবস্থায় যে আমার কোনো লাভ-ক্ষতি হয় নি।’
কবি তার প্রেয়সীকে ভালোবাসেন। সে ভালোবাসার ব্যাপারে তিনি সচেতন। তিনি চান, যখন তিনি এ ভালোবাসার জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসবেন, তখন যেন তার কোনো প্রকার লাভ-ক্ষতি না হয়, আগের মত জীবন চলতে থাকে।
-   পংক্তিটির দ্বিতীয় অংশে لا علي ولا ليا এখানে কিছু অংশ মুছে ফেলা হয়েছে। মূলত এখানে হওয়ার কথা لا علي شيء ولا لي شيءকিন্তু কবি এমনটা লিখে থাকলে কবিতার ওযন রক্ষা হত না। তাই এখানে মুছে ফেলার উদ্দেশ্য হল المحافظة على وزن তথা ওযন রক্ষা করে চলা।


·        وأنت الذي أخلفتني ما وعدتني * وأشمت بي من كان فيك يلوم
পংক্তিটির অর্থ, ‘আপনিই তো আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা ভেঙেছেন। যারা আপনার ব্যাপারে তিরস্কার করত, তাদেরকে আপনি আনন্দিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন আমার মুসিবতে।’
কবি এখানে তার প্রেমিককে বলছেন, আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন, তা ভেঙেছেন। আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। যারা আপনার সাথে আমার সম্পর্কের কারণে আমাকে তিরস্কার করত, তারা এখন আমাদের সম্পর্কে ভেঙে যাওয়াতে আনন্দিত। আমার এ বিপদে আপনি তাদেরকে আনন্দিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
-   পংক্তিটি শুরু হয়েছে দ্বমীর أنت এর মাধ্যমে। বাক্যের মুসনাদ ইলাইহি (মুবতাদা) দ্বমীর হিসেবে ব্যবহার করার একটা ক্ষেত্র হল كون الحديث في مقام الخطاب তথা কথা/বক্তব্যটা হবে শ্রোতাকে উদ্দেশ্য করে। যখন শ্রোতাই কথার মূল আকর্ষণ, তখন ‘মুসনাদ ইলাইহি’ হিসেবে দ্বমীরটা নিয়ে আসা হবে; আর এখানে তা-ই করা হয়েছে।



·        إذا أنت أكرمت الكريم ملكته* وإن أنت أكرمت اللئيم تمردا
পংক্তিটির অর্থ, ‘আপনি যদি সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান করেন, তাহলে তাকে বশ করে ফেলতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে সম্মান দেন, তাহলে সে বেঁকে বসবে।’
কবি মুতানাব্বী মর্যাদার অধিকার‍ী ব্যক্তিদের সম্মান করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। কেননা তারা প্রাপ্ত সম্মানের কারণে সদাচরণ করবে, দুর্ব্যবহার করবে না বা কোনো প্রকার অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না। অন্যদিকে নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের সম্মান দিতে নিষেধ করেছেন, কারণ তারা প্রাপ্ত সম্মানকে দাম দিতে জানে না। তারা বেঁকে বসে এবং যিনি সম্মান করেন তার সাথে দুর্ব্যবহার করতে পরোয়া করে না।
-   পংক্তিটিতে أنت দ্বমীরটি ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণত এটি ব্যবহৃত হয় দৃশ্যমান কোনো ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করে বোঝানোর জন্য। কিন্তু এখানে ব্যবহৃত হয়েছে অনির্দিষ্টভাবে সকলকে। এটি একটি ব্যতিক্রমী ব্যবহার ক্ষেত্র। এর মাধ্যমে সকল শ্রোতাকে পৃথক পৃথকভাবে সম্বোধন করা হয়েছে।
-   পংক্তিটিতে جناس تام হয়েছে। উভয় অংশে أنت أكرمت দ্বিরুক্তি হয়েছে جناس এর নিয়মনীতি মেনে।
-   পংক্তিটিতে طباق হয়েছে। طباق বলতে বোঝায় অর্থের দিক থেকে বিপরীত দুটি বিষয় পরপর আনা। এখানে الكريماللئيم দুটি বিপরীতার্থক শব্দ। এগুলো আনয়নের মাধ্যমে طباق করা হয়েছে।
-   পংক্তিটিতে প্রথম অংশে إذا আর দ্বিতীয় অংশে إن ব্যবহৃত হয়েছে। إذا ব্যবহৃত হয় এমন কিছুর ক্ষেত্রে যা খুব বেশি বা সচরাচর ঘটে থাকে, অন্যদিকে إن ব্যবহৃত হয় এমন কিছুর ক্ষেত্রে যা ঘটা বিরল। সম্মানিত ব্যক্তিকে প্রায়শ সম্মান দেওয়া হয়, সে তুলনায় নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে কম-ই দেওয়া হয়।



·        أبت الوصال مخافة الرقباء* وأتتك تحت مدارع الظلماء
পংক্তির অর্থ, ‘সে লোকচক্ষুর ভয়ে তোমার সাথে অভিসার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। আর অন্ধকারের ঢাল পরে তোমার কাছে এসে হাজির হয়েছে।’
কবি তার প্রেয়সীর সাথে সাক্ষাত করতে চেয়েছিল। কিন্তু লোকচক্ষুর ভয়ে প্রেয়সী সাড়া দেয় নি। পরে যখন অন্ধকার নেমে এল, তখন প্রেয়সী এসে হাজির।
-   পংক্তিটিতে إضمار في مقام الإظهار হয়েছে। শুরুতে একটি ক্রিয়া أبت রয়েছে, যেটি একটি দ্বমীর هي ধারণ করে। অথচ ইতঃপূর্বে তার পরিচয় দেওয়া নেই। এরই নাম হলো إضمار في مقام الإظهارঅর্থাৎ কবি ‘দাবি করেন’ যে তার হৃদয়-মনে সর্বদা সেই ব্যক্তি উপস্থিত, তাই তার নাম নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এমন দাবি করে থাকলে তখন নাম নেওয়ার আগেই দ্বমীর ব্যবহৃত হয়, আগে পরিচয় দেওয়া লাগে না।
-   পংক্তিটিতে مشبه به তথা مدارعঅর্থাৎ ঢালসমূহ আর مشبه তথা الظلماء অর্থাৎ অন্ধকার উভয়টি উল্লেখ করা আছে। পরে মুশাব্বাহ বিহিকে মুশাব্বাহের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে। মোটকথা, এখানে তাশবীহ হয়েছে।




·        سقى الله نجدا والسلام على نجد* ويا حبذا نجد على القرب والبعد
পংক্তির অর্থ, ‘আল্লাহ নজদে বৃষ্টি বর্ষণ করুন। নজদকে সালাম। আহা! কত প্রিয় এ নজদ ভূমি, দূরে থাকুক বা কাছে থাকুক।’
কবির প্রিয় ভূমি নজদ। নিজ জন্ম-ভূমি ও শৈশবের স্মৃতি-বিজড়িত এ ভূমিকে তিনি ভুলতেই পারছেন না। তাই নজদভূমির কল্যাণ কামনা করছেন আল্লাহর কাছে। বৃষ্টি বর্ষিত হোক নজদ ভূমিতে, ফুলে-ফলে ভরে উঠুক। দূর থেকে তিনি নজদকে সালাম দিচ্ছেন। কাছে হোক কিংবা দূরে হোক, সর্বদা নজদের প্রতি তার ভালোবাসা বেঁচে থাকবে।
-   পংক্তিটিতে দ্বমীরের পরিবর্তে বারংবার মূল শব্দটাকে ব্যবহার করা হয়েছে। এর কারণ কবির التلذذ তথা স্বাদ অনুভব করতে পারা। দ্বমীর ব্যবহার করা উপযোগী স্থানেও মূল শব্দ পুনরায় ব্যবহার করার একটা কারণ এটা।



·        كم عاقل أعيت مذاهبه* وجاهل تلقاه مرزوقا
هذا الذي ترك الأوهام حائرة* وصير العالم النحرير زنديقا
পংক্তির অর্থ, ‘এমন কত বুদ্ধিমান আছে, যাদের চলার পথ রুদ্ধ হয়েছে গেছে; যেখানে কত জাহেল আছে, যারা রিযিক পেয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনা মানুষের চিন্তাকে ফেলে দিয়েছে বিভ্রান্তিতে, আর বিজ্ঞ আলেমকেও বানিয়েছে নাস্তিক।’
দুনিয়ার বুকে অনেক বিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তি আছে, যাদের টানা-পোড়েনের জীবন। এক বেলা খেতে পায় তো দুবেলা পায় না। অন্যদিকে অনেক অজ্ঞ মানুষ আছে, যারা অবিরত রিযিক পেয়ে চলেছে। এমন দৃশ্যপট মানব-কল্পনায় আঘাত হানে, তাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। অনেক বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ আলেম এমন অবস্থা দেখে কুফরী করে বসে, তার বিশ্বাস রূপ নেয় নাস্তিকতায়।
-   এখানে দ্বিতীয় পংক্তিতে মুসনাদ ইলাইহি হিসেবেهذا (এটি) ইসমে ইশারা ব্যবহৃত হয়েছে। ইসমে ইশারা কোনো কিছুর প্রতি নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মূল অর্থের বাহিরে নানাবিধ অর্থে তার ব্যবহার বিদ্যমান। প্রদত্ত পংক্তিতে ব্যবহৃত হয়েছে إظهار الاستغراب তথা বিস্ময় প্রকাশের জন্য। এরূপ ঘটনা বিস্ময়কর বলেই এখানে ইসমে ইশারার ব্যবহার।



·        هذا الذي تعرف البطحاء وطأته* والبيت يعرفه والحل والحرم
পংক্তির অর্থ, ‘এই সেই লোক, যার পদক্ষেপ ‘বাত্‌হা’ চিনে, চিনে বাইতুল্লাহ, চিনে ‘হিল্ল’ ও ‘হারাম’।
কবি ফারাযদাক্ব প্রশংসা করছিলেন যাইনুল আবিদীনের। তিনি কেবল জনপ্রিয় তা নন, তাকে মক্কার মাটি, বাইতুল্লাহ, হিল্ল নামক স্থান ও হারাম— সকল কিছু চেনে। তিনি এমনই অনন্য এক ব্যক্তি।
-   পংক্তিতে ইসমে ইশারা ‘মুসনাদ ইলাইহি’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ইসমে ইশারা সাধারণত কোনো কিছুর প্রতি নির্দেশ করে। কিন্তু এখানে ভিন্নার্থ নিয়েছে। আর তা হলো— كمال العناية وتمييزه أكمل تمييز (বিশেষ গুরুত্বারোপ এবং পরিপূর্ণভাবে পৃথকীকরণ)। কত মানুষই তো আছে, তাদের মাঝে এই মানুষটি আলাদা, ভিন্ন ও অনন্য। সেটা বোঝাতে এখানে ইসমে ইশারার ব্যবহার।
-   পংক্তিতে ‘বাত্বহা’, ‘হিল্ল’ ও ‘হারাম’ শব্দগুলো দ্বারা এর অধিবাসীদের বোঝানো হয়েছে। এভাবে কোনো স্থান দ্বারা তার অধিবাসীদের বুঝিয়ে থাকলে তাকে বলা হয় المجاز المرسل এবং এর علاقة হলো المحلية (স্থানসূচক)।


·        أولئك آبائي فجئني بمثلهم* إذا جمعتنا يا جرير المجامع
পংক্তির অর্থ, ‘ওরাই মোদের পূর্বসূরী, ওদের নিয়েই গর্ব করি। ওহে জারীর দেখাও দেখি, আছে নাকি তাদের জুড়ি।’
ফারাযদাক্ব তার প্রতিপক্ষ জারীরকে নিজ বংশ মর্যাদার কথা বলে ঘায়েল করছে। ফারাযদাক্ব সেই বংশ নিয়ে গর্ব করে জানিয়ে দিচ্ছে যে আমি সদ্বংশীয়। অন্যদিকে তোমার এমন কোনো বংশ মর্যাদা নাই, যা দিয়ে তুমি গর্ব করতে পারবে। আছে কি এমন কেউ তোমার বংশে?
-   পংক্তিটিতে هم آبائي না বলে কবি أولئك آبائي বলেছেন। ব্যক্তির ক্ষেত্রে দ্বমীর তথা هم ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু জারীরকে এখানে বোকা হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। তাই তিনি বলেছেন أولئك , ব্যবহার করেছেন ইসমে ইশারা। যেন তাকে ইসমে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে না দেওয়া হলে সে বুঝতে পারবে না, সে এতই নির্বোধ। এটাকে বলা হয়, التعريض بغباوة المخاطب (শ্রোতার নির্বুদ্ধিতার দিকে ইঙ্গিত করা)।
-   পংক্তিতে হরফে নেদা يا ব্যবহার করা হয়েছে। এটি দূরবর্তী কোনো কিছুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু জারীর কবির সম্মুখে অবস্থিত এবং তার সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত। সুতরাং এখানে কবি তাকে তুচ্ছজ্ঞান করে (تحقير) দূরে অবস্থিত বলে কল্পনা করে কবিতায় হরফে নেদা (يا) ব্যবহার করেছেন।


বালাগাতপূর্ণ আরেকটি লাইন...
·        والذي حارت البرية فيه* حيوان مستحدث من جماد
পংক্তির অর্থ, ‘সৃষ্টিজগত তার ব্যাপারে সংশয়ে পড়েছে, সে এমন প্রাণী যাকে মাটি থেকে পুনরায় সৃষ্টি করা হবে।’
কবি আবুল ‘আলা আল-মা‘আররি সংশয়বাদী কবি। কখনো তিনি পরকালের ব্যাপারেও সন্দেহে পতিত হয়েছিলেন (নাস্তাগফিরুল্লাহ)। সেই প্রাণীর ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন যে প্রাণীকে আবার স্থির মাটি থেকে সৃষ্টি করা হবে। সন্দেহটা সৃষ্টিজগতের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করেছেন।
-   পংক্তিতে الذي ইসমে মাওসূল শুরুতেই ‘মুসনাদ ইলাইহি’ হিসেবে এসেছে। উদ্দেশ্য হল পাঠক-শ্রোতার মনে আগ্রহ তৈরি। যখন তিনি বললেন, ‘সৃষ্টিজগত তার ব্যাপারে সংশয়ে’ তখন পাঠকের মনে আগ্রহ সৃষ্টি হয় সেটা কে তা জানার জন্য। এটাকে বলা হয়- التشويق তথা আগ্রহ সৃষ্টি করা।



কোন মন্তব্য নেই

Barcin থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.