বালাগাত কাকে বলে ? বালাগাত কত ও প্রকার কি কি? এসো বালাগাত শিখি ব্যাখ্যাসহ পার্ট-২
বালাগাত কাকে বলে? বালাগাত কত প্রকার ও কি কি? এসো বালাগাত
শিখি ব্যাখ্যাসহ পার্ট-২
বালাগাত কাকে বলে ? বালাগাত কত প্রকার ও কি কি? |
আরেকটি বালাগাত মিশ্রিত কবিতার লাইন…
· إن الذين ترونهم إخوانكم* يشفي غليل صدورهم أن تصرعواপংক্তির অর্থ, ‘যাদেরকে তোমরা ভাই মনে করছ, তোমরা মারা গেলে তাদের হৃদয় প্রশান্তি পাবে।’কবি শ্রোতাবর্গকে একটি বিশেষ গোষ্ঠী থেকে সাবধান করে জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘তাদেরকে তোমরা ভাই মনে করছ? তারা কখনোই তোমাদের ভাই না, তারা তোমাদের সর্বোচ্চ ক্ষতি করতে সদা তৎপর। তোমরা যদি মারা যাও, তাহলেই কেবল তাদের হৃদয়ে প্রশান্তির সুশীতল জল প্রবাহিত হবে।’- পংক্তিতে কবি الذين ব্যবহার করেছেন, তবে মূল অর্থে কোনো সংযোজক হিসেবে নয়, বরং তা দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন শ্রোতাকে তার ভুল থেকে সতর্ক করা। শ্রোতাগণ একটি সম্প্রদায়কে তাদের ভাই ও হিতাকাঙ্ক্ষী মনে করে বসে আছে। কিন্তু তারা ভুলের উপর আছে। সেই সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ না করে তিনি الذين ترونهم إخوانكم ‘যাদেরকে তোমরা ভাই মনে করছ’— এভাবে ব্যবহার করেছেন। একে বলা হয়— التنبيه على خطأ المخاطب (শ্রোতাকে তার ভুল থেকে সতর্ক করা)।
· إن التي زعمت فؤادك ملها* خلقت هواك كما خلقت هوى لهاপংক্তির অর্থ, ‘যে নারী দাবি করছে যে তোমার হৃদয় তার ব্যাপারে বিরক্ত, সে নারী তোমাকে ভালোবাসার জন্যই সৃষ্ট, যেমন তুমি তাকে ভালোবাসার জন্য সৃষ্ট।’কবি যাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছেন, তার প্রেয়সী দাবি করে যে সে তার ব্যাপারে বিরক্ত, তাকে আর আগের মত ভালোবাসে না। কিন্তু সে দাবি ভুল, বরং সে (পুরুষ) তো তাকে (নারীকে) ভালোবাসার জন্য সৃষ্ট; যেমন সে (নারী) সেই (পুরুষকে) ভালোবাসার জন্য সৃষ্ট।- পংক্তিটিতে কবি একজন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছেন, আর জানাচ্ছেন তৃতীয় এক নারী সম্পর্কে। সে নারীর ধারণা ভুল, সেটা বোঝাতে তার ক্ষেত্রে ইসমে মাওসূল التي ব্যবহৃত হয়েছে। এর নাম— التنبيه على خطأ غير المخاطب (শ্রোতা ব্যতীত অন্যের ভুল থেকে সতর্ক করা)
· إن الذي سمك السماء بنى لنا* بيتا دعائمه أعز وأطولপংক্তির অর্থ, ‘যিনি আসমান তৈরি করেছেন, তিনিই আমাদের জন্য এমন বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন যার ভিত্তি সুদৃঢ় ও লম্বা।’ফারাযদাক্ব তার বাড়ির বর্ণনা দিয়ে প্রশংসা করছেন। তাই জানিয়ে রাখছেন যে তার বাড়িটা সেই সত্তার ইচ্ছাতেই তৈরি, যিনি আসমানের সৃষ্টিকর্তা।- পংক্তিতে ইসমে মাওসূল ব্যবহার করা হয়েছে তার পরে উল্লেখিত সত্তার মর্যাদা বোঝাতে। সরাসরি নাম উল্লেখ না করে ইসমে মাওসূল ব্যবহার করে তার একটি কর্ম (আসমান তৈরি)-র কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে তাকে বিশেষভাবে সম্মান করা হয়েছে। এর নাম— تعظيم شأن المحكوم به (হুকুমের মর্যাদা বৃদ্ধি)।
· أنت نجم في رفعة وضياء* تجتليك العيون شرقا وغرباপংক্তির অর্থ, ‘আপনি সুউচ্চে আলোকিত একটি তারকা, পূর্ব-পশ্চিমে লোকচক্ষু আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে থাকে।’কবি প্রশংসিত ব্যক্তিকে তুলনা করেছেন একটি তারকার সাথে। পূর্ব-পশ্চিমে যত মানুষ আছে সব যেভাবে উজ্জ্বল তারকাকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে, তেমনিভাবে সেই ব্যক্তিও এত প্রশংসিত যে সকলে তাকে চিনে।- পংক্তিতে أنت শব্দটি মুশাব্বাহ। نجم শব্দটি মুশাব্বাহ বিহি। তুলনার দিক (ওয়াজহুশ শাবাহ) হলো উচ্চতা ও উজ্জ্বলতা। কিন্তু উল্লেখ নেই কেবল ‘আদাতুত তাশবীহ’। এর নাম: ‘তাশবীহ মুয়াক্কাদ’।
· إنما الدنيا كبيت* نسجه من عنكبوتপংক্তির অর্থ, ‘দুনিয়া একটি বাড়ির মত, যার বুনন মাকড়শার বাড়ির মত।’মাকড়শার বাড়ি খুবই দুর্বল ও ভঙ্গুর। দুনিয়াও এমনই। যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এর বুনন খুবই হালকা।- পংক্তিতে الدنيا শব্দটি মুশাব্বাহ, البيت মুশাব্বাহ বিহি। ك হরফটি হলো ‘আদাতুত তাশবীহ’। কিন্তু উল্লেখ নেই ‘ওয়াজহুশ শাবাহ’ (সাদৃশ্যের দিক)। এর নাম: ‘তাশবীহ মুজমাল’।
· إنما الدنيا كبيت *نسجه من عنكبوت- পংক্তিটিতে আদাতুত তাশবীহ উল্লেখ আছে। এ কারণে এর নাম: ‘তাশবীহ মুরসাল’।
আরবি ব্যাকরণ শিক্ষা নাহু সরফ কোর্স ফ্রি এখানে ক্লিক করুন
· يا شبيه البدر حسنا وضياء ومنالا* وشبيه الغصن لينا وقواما واعتدالاপংক্তির অর্থ, ‘সৌন্দর্য, আলো ও প্রাপ্তিতে তিনি পূর্ণিমার চাঁদের মত। নম্রতা, গড়ন ও পরিমিতিতে তিনি গাছের ডালের মত।’কবি যার প্রশংসা করেছেন তার সৌন্দর্য, আলো ও প্রাপ্তিকে তুলনা করেছেন পূর্ণিমার চাঁদের এ সকল গুণের সাথে। আবার নম্রতা, গড়ন ও পরিমিতিতে তুলনা করেছেন গাছের ডালের সাথে।- পংক্তিতে কবি মুশাব্বাহ ও মুশাব্বাহ বিহি উল্লেখ করেছেন। সাদৃশ্যের দিকগুলো বিস্তারিত দিয়েছেন। বাকি ছিল কেবল আদাতুত তাশবীহ। সেটা দেওয়া হয় নি। এ প্রকার তাশবীহের নাম: ‘মুফাস্সাল’। বলে রাখা ভালো, একই তাশবীহ মুরসাল ও মুফাস্সাল হতে পারে, যদি ‘আদাতুত তাশবীহ’ ও ‘ওয়াজহুশ শাবাহ’ উভয়টা উল্লেখ করা হয়।
· فاقضوا مآربكم عجالا إنما* أعماركم سفر من الأسفارপংক্তির অর্থ, ‘তোমরা দ্রুত নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করে ফেল। জীবন তো একটা সফর মাত্র।’জীবন ক্ষণস্থায়ী। যে কোনো সময় শেষ হয়ে যাবে। জীবনের তুলনা করেছেন কবি একটি সফরের সাথে। তাই দ্রুত দুনিয়াবী যত প্রয়োজন সব সেরে ফেলতে বলেছেন তিনি।- পংক্তিতে শুধু ‘মুশাব্বাহ’ (أعماركم) ও ‘মুশাব্বাহ বিহি’ (سفر) আছে। আদাতুত তাশবীহ আর ওয়াজহুশ শাবাহ উল্লেখ করা হয় নি। এরূপ তাশবীহের নাম: ‘বালীগ’।
· وما المرء إلا كالشهاب وضوئه* يوافي تمام الشهر ثم يغيبপংক্তির অর্থ- ‘মানবজীবন তো চাঁদ ও তার আলোর মত। মাস পূর্ণ করে ধীরে ধীরে তা অদৃশ্য হয়ে যায়।’নতুন চাঁদ আকাশে ছোট হয়ে দেখা দেয়। তারপর বড় হতে থাকে। এক সময় বিরাট আকৃতি ধারণ করে পূর্ণিমার রাতে। মাসটা শেষ হয়ে আসতেই আবার ছোট হয়ে আসে। অমাবস্যায় অদৃশ্য হয়ে যায় চাঁদ। মানবজীবনও এমন। সূচনা হয় শৈশব দিয়ে। কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন, প্রৌঢ়তা পেরিয়ে বার্ধক্য এসে পড়ে। জীবন-বাতি নিভে যায় একদিন।- পংক্তিতে যে সাদৃশ্য করা হয়েছে তাতে সাদৃশ্যের দিকটা একাধিক চিত্র সম্বলিত। চাঁদের জন্ম, বৃদ্ধি ও অদৃশ্য হওয়ার চিত্র মানুষের জীবনের ছোট থেকে বড় হওয়ার কিছু চিত্রের সাথে মিলে। এ রকম কয়েকটি চিত্র মিলে তাশবীহ করা হলে তার নাম: ‘তাশবীহুত তামসীল’।
· وبدأ الصباح كأن غرته* وجه الخليفة حين يمتدحপংক্তির অর্থ- ‘সকালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছে প্রশংসিত খলীফার চেহারা।’কবি খলীফার প্রশংসা করেছেন এটা বলে যে, সকালের যে সৌন্দর্য তা দেখলে আমার মনে হয় প্রশংসিত হওয়ার মুহূর্তে খলীফার উৎফুল্ল চেহারার কথা।- পংক্তিতে কবি খলীফার হাসি মুখ সকালের সাথে তুলনা না করে সকালকে তুলনা করেছেন খলীফার হাসিমুখের সাথে। অর্থাৎ ‘মুশাব্বাহ’ (খলীফা) আর ‘মুশাব্বাহ বিহি’ (চাঁদ) হওয়ার কথা। সে জায়গায় তিনি চাঁদকে মুশাব্বাহ বানিয়ে খলীফাকে মুশাব্বাহ বিহি করেছেন। এই রকম উল্টা তাশবীহের নাম: ‘আত-তাশবীহুল মাকলূব’।
· إذا نزل السماء بأرض قوم* رعيناه وإن كانوا غضاباপংক্তির অর্থ, ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের ভূমিতে বৃষ্টি নেমে আসে, আমরা তার ঘাঁসে পশু চরাই, যদিও তারা ক্রোধান্বিত হয়।’কবির সম্প্রদায় নিজেদের পশু চরানোর ব্যাপারে কারো পরোয়া করে না। যে কোনো সম্প্রদায়ের জমিতে বৃষ্টি বর্ষিত হলে তারা তাতে নিজেদের পশু চরায়। তাতে তারা রেগে গেলেও কিছু আসে-যায় না।- পংক্তিতে السماء শব্দটি প্রথমে ব্যবহৃত হয়েছে বৃষ্টি অর্থে, পরে ব্যবহৃত হয়েছে ঘাঁস বা উদ্ভিদ অর্থে। এভাবে একই শব্দ একবার এক অর্থ আর দ্বিতীয় বার দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহৃত হলে তার নাম الاستخدام।
· وإنا لقوم لا نرى القتل سبة* إذا ما رأته عامر وسلوليقرب حب الموت آجالنا لنا* وتكرهه آجالهم فتطولপংক্তির অর্থ, ‘আমরা এমন সম্প্রদায়, যারা নিহত হওয়াকে গালি মনে করি না, যেমনটা আমের-সালূল গোত্রদ্বয় মনে করে। মৃত্যুর ভালোবাসা আমাদের মৃত্যুকে কাছে নিয়ে আসে। আর তারা মৃত্যুকে অপছন্দ করে, ফলে তাদের জীবন দীর্ঘায়িত হয়।’- পংক্তিতে কবি প্রথমে শুরু করেছিল আত্মগর্ব দিয়ে, তারপর চলে গিয়েছিল অন্য গোত্রের নিন্দাবাদে, শেষে ফিরে এল আবার আত্ম-গর্বে। এভাবে টপিক চেঞ্জ করার নাম الاستطراد।
· اصبر يزيد فقد فارقت ذا ثقة* واشكر حباء الذي بالملك أصفاكلا رزء أصبح في الأقوام نعلمه* كما رزئت ولا عقبى كعقباكপংক্তির অর্থ, ‘ইয়াযীদ, তুমি ধৈর্য ধর, তুমি হারিয়েছ এক নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে। যিনি তোমাকে রাজত্ব দিয়েছেন, তার দানের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাও। তুমি যেমন বিপদে পড়েছ, এমন বিপদে কেউ পড়েছে কিনা জানি না, তোমার মত প্রতিদানও কেউ পায় নি।’- পংক্তিতে পরস্পর বিপরীত দুটি বিষয় (সান্ত্বনা ও অভিনন্দন) পরপর নিয়ে এসেছেন। এর নাম الافتنان অর্থাৎ ফন্ন পরিবর্তন।
· وما كلفة البدر المنير قديمة* ولكنها في الوجه أثر اللطمপংক্তির অর্থ, ‘উজ্জ্বল চাঁদের শরীরে যে কলঙ্ক, তা পুরাতন না, বরং চেহারায় আঘাতের চিহ্ন।’- পংক্তিতে বোঝানো হয়েছে, অমুক ব্যক্তির মৃত্যুতে সকল কিছু শোকাহত। এমনকি চাঁদও। চাঁদের শরীরে যে কলঙ্ক তা আগে থেকে ছিল এমন না। কিন্তু ঐ ব্যক্তির জন্য শোক করতে গিয়ে মুখ চাপড়ানোর কারণে সেই কলঙ্ক লেগেছে মুখে। এভাবে কোনো একটা কিছুর প্রকৃত কারণ অস্বীকার করে ভিন্ন কারণ তৈরি করার নাম حسن التعليلওয়ালহামদুলিল্লাহি আউয়ালান ওয়া আখিরা!
কোন মন্তব্য নেই