আরবি ব্যাকরণ শিক্ষা : আলিফ লাম কত প্রকার ও কি কি?
আরবি ব্যাকরণ শিক্ষা : আলিফ লাম কত প্রকার ও কি কি?
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আরবি ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। প্রত্যেক ভাষায় কিছু শব্দ বা অব্যয়পদ থাকে যার মাধ্যমে ভাষার ব্যবহার এর ক্ষেত্রে শব্দ বা বাক্যকে নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। আরবি ভাষায় কোনো নাম বা শব্দ বা বাক্যকে নির্দিষ্ট করার জন্যসাধারণত আলিফ লাম ব্যবহার করা হয়। এখানে আমরা আলিফ লাম কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ।
আরবি ব্যাকরণের পরিভাষায় আলিফ লাম সাধারণত দুই প্রকার।
- ১)আলিফ লামে ইসমী (ال إسمي )
- ২)আলিফ লামে হরফী ( ال حرفي)
আলিফ লামে ইসমী কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
আলিফ লামে ইসমী এমন আলিফ লামকে বলা হয় যা আরবি ব্যাকরণের Relative Pronoun বা ইসমে মাউসুল আল্লাযী ( الذي=যিনি/যা/যে ইত্যাদি) এর অর্থ প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
এটা ব্যবহার এর দিক থেকে আবার দুই প্রকার।
১)কাসীরুল ইসতি'মাম (كثير الإسعمال)
যে আলিফ লাম ইসমে ফায়েল বা কর্তা বিশেষ্যপদ ও ইসমে মাফউল বা কর্ম বিশেষ্যপদ এর শুরুতে আসে তাকে বলা হয়।
যেমন,
هذا الضــاربُ زيدًا اي الذي ضَرَبَ زَيدًا
ইনি যিনি যায়েদকে প্রহার করেছেন।
এখানে আদ-দারিবু এর আলিফ লামটি উদ্দেশ্য।
هذا المضروبُ اي الذي ضُرِبَ أو يُضْرَبُ
এই লোক যিনি প্রহাহৃত হয়েছেন।
এখানে আল-মাদরুব এর আলিফ লাম টি উদ্দেশ্য।
২)ক্বলিলুল ইসতি'মালঃ-(قليل الإستعمال)
যা ইসমে যরফ, ফেয়েলে মুজারে ও জুমলায়ে ইসমিইয়্যাহ এর শুরুতে আসে।
এর ব্যবহার খুব কম তাই এটা নিয়ে আলোচনা করছিনা। সাধারণত কিছু কবিতায় পাওয়া যায়। সচরাচর এর ব্যবহার কম।
এবার আসি আলিফ লামে হরফী সম্পর্কে।
আলিফ লামে হরফী কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
আলিফ লামে হরফী হচ্ছে এমন আলিফ লাম যেগুলো ইসমের শুরুতে ব্যবহার হয়ে কখনও বিভিন্ন অর্থ দেয় আবার কখনো অতিরিক্ত হিসেবে আসে, যা বিলুপ্ত করে দেয়া যায়।
আলিফ লামে হরফী প্রথমত তিন প্রকার
১)আলিফ লামে আহদি (ال للعهدي)
- আহদি আবার তিন প্রকার
১)আলিফ লামে আহদে হুযুরী (الحضوری)
যার আলোচনা বিদ্যমান থাকে বা বর্তমান রয়েছে তাকে আলিফ লামে হুযুরী বলা হয়।
যেমন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ
আমি আজ তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।
এখানে আল-ইয়াওমা এর আলিফ লামটি উদ্দেশ্য। আজ বলতে সময়টা এখনো বিদ্যমান বুঝাচ্ছে। আজ এখনো চলে যায়নি। এরকম মাত্র বা বিদ্যমান অবস্থা বুঝাতে আলিফ লামে হুযুরী ব্যবহার করা হয়।
আরো কয়েকটি উদাহরণ,
জি'তুল ইয়াওমা
আমি আজ এলাম।
এখানেও আল-ইয়াওমা এর আলিফ লামটি উদ্দেশ্য।
আকালতু আল-আনা
আমি এখন খেলাম।
এখানে আল-আন এর আলিফ লামটি উদ্দেশ্য।
আরো পড়ুন......
আসমায়ে মাজরুরাত কাকে বলে কত প্রকার কি কি জানতে এখানে ক্লিক করুন
আরো পড়ুন......
আসমায়ে মাজরুরাত কাকে বলে কত প্রকার কি কি জানতে এখানে ক্লিক করুন
২)আলিফ লামে আহদে যিকরি (الذكري)
আলিফ লামে আহদি যিকরি বলা হয় কোনো ইসম যদি প্রথমে অনর্দিষ্টভাবে উল্লেখ করার পর সেই ইসমটিকে আলিফ লাম দ্বারা নির্দিষ্ট করে আনা হয়, তবে সে আলিফ লাম যুক্ত ইসমের আলি লাম কে বলা হবে আলিফ লামে আহদে যিকরি।
যেমন,
اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ
এখানে মিসবাহ শব্দের আলিফ লামটি আলিফ লামে আহদে যিকরি।
কারণ এখানে আল-মিসবাহ শব্দটি প্রথমে আলিফ লাম ছাড়া অনির্দিষ্ট করে আনার পর পরে আবার তা আলিফ লাম দিয়ে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ২য় আল-মিসবাহ শব্দের আলিফ লামটি হবে আলিফ লামে যিকরি। যার মাধ্যমে নির্দিষ্টটা বুঝিয়েছে।
আরো কিছু উদাহরণ,
ইশতারাইতু ক্বলামান ফা-কাতাবতু বিল ক্বলামি
অর্থ, আমি একটি কলম কিনলাম অতঃপর কলমটি দিয়ে লিখলাম।
জা'আ রাজুলুন ফা-্কনারামতু আর-রাজুলা
অর্থ, একজন লোক এলো আমরা লোকটিকে সম্মান করলাম।
উল্লেখিত ২টি উদাহরণ ২য় বার যে শব্দটি আলিফ লাম দিয়ে নির্দিষ্ট করে আনা হয়েছে সেই আলিফ লামটি হবে আলিফ লামে যিকরি।
৩)আলিফ লামে আহদে যিহনী (الذهني)
যার কথা বা স্মরণ বক্তা ও শ্রোতা উভয়ের মস্তিষ্কে বা জেহেন থাকে।
যেমন,
إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ
যখন তারা আপনার কাছে গাছটির নিচে বায়াত গ্রহণ করে।
এখানে আশ-শাজারাতা এর আলিফ লামটি আলিফ লামে আহদে যিহনী। অর্থাৎ এখানে বক্তা হলেন আল্লাহ আর যিনি অবশ্যই গাছটি সম্পর্কে অবগত আর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো গাছের নিচে বায়াত গ্রহণ করেছেন সুতরাং তিনি গাছটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাই এখানে নির্দিষ্টতা বুঝিয়েছে।
আরো একটি উদাহরণ,
جاء الرَّجلُ
লোকটি আসল।
এখানে এমন লোক উদ্দেশ্য যার ব্যপারে শ্রোতা এবং বক্তা উভয়ে অবগত।
২) আলিফ লামে যায়েদাহ(لزاءدة)
আলিফ লামে যায়েদাহ আবার দুই প্রকার
- ১) লাযিমাহ ( لازمية)
যে সব নাম আলিফ লাম যুক্ত করে রাখা হয়েছে এবং সেগুলো থেকে আলিফ লাম কে আলাদা করা যায় এমন আলিফ লামকে আলিফ লামে লাযেমাহ বলে।
যেমন,
,الله, اللات,الذي,التي
এখানে সব ইসিমের আলিফ লাম নামের সাথে যুক্ত করে রাখা হয়েছে। এগুলো আলাদা করা যায় না বা হযফ করা যায় না।
- ২)গইরে লাযেমাহ ( غير لازمية)
যেসব নামে আলিফ লাম যুক্ত করা যায় এবং আলিফ হযফ করা যায় সে সব আলিফ লামকে বলা হয় আলিফ লামে গইরে লাযেমাহ।
যেমন,
الـحسن ـ حسن
الـرشيد ـ رشيد
الـخالد ـ خالد
এখানে প্রতিটি নামের সাথে আলিফ লাম যুক্ত করা যায় আবার হযফও করা যায়।
৩)আলিফ লামে জিনসি (جنسي)
আলিফ লামে জিনসি আবার তিন প্রকার
- ১) লি বায়ানিল হাক্বিকিইয়াহ ওয়াল মাহিয়্যাহ (لبيان حقيقية والماهية)
হাকিকত- মাহিয়্যাত - মূল ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার জন্য এই আলিফ লামটি ব্যবহার করা হয় যেখানে কুল্লু ব্যবহার করা যায় না।
যেমন,
وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ
সমস্ত প্রাণীকে আমি পানির হাকিকত মাহিয়্যত বা সার/স্বভাব থেকে সৃষ্টি করেছি।
এখানে পানি শব্দের শুরুতে যে আলিফ লাম এসেছে এখানে কুল্লু শব্দের ব্যবহার করা যায় না। বরং এই আলিফ লাম হাকিকত বা স্বভাবের অর্থ দিয়েছে।
- ২)লি ইসতগরাক্বিল জিনসিল হাক্বীকি (لإستغراق الجنس الحقيقي)
যে আলিফ লাম দ্বারা সকল আফরাদকে শামিল করে বা সমস্ত অর্থে আসে। যেখানে কুল্লু শব্দের ব্যবহার করা যাবে সেখানে আলিফ লামে ইসতিগরাক্বী ব্যবহার করা যাবে।
যেমন,
وَخُلِقَ الْإِنْسَانُ ضَعِيفًا
সকল মানুষকে দূর্বলকরে সৃষ্টি করা হয়েছে।
আল ইনসান এর আলিফ লামটি কুল্লু শব্দের অর্থ দিচ্ছে। বা সমস্ত অর্থে ব্যবহার হচ্ছে।
- ৩) লি ইসতিগরাক্বিল জিনসি ফিল জুমলাতি বা ইসতিগরাক্বুল খাসাইসুল আফরাদ (لإستغراق الجنسي في الجملة أو إتغراق الخصائص الأفراد)
অর্থাৎ বাক্যের মধ্যে কোনো জিনস বা জাতির সামগ্রিতা বোঝায়।
যেমন,
أنت المرأة كرامة
তুমি মহিলাদের সকল গুণে গুণান্বিত।
এখানে একজনের গুণ বা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। এবং এটা বাক্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, বাস্তবে এ সব গুণে গুণান্বিত নাও হতে পারে।
আবার
الرجلُ أفضل من المرأةِ
অর্থ হচ্ছে পুরুষ জাতি মহিলা জাতি থেকে উত্তম।
এর দ্বারা সকল পুরুষ সকল মহিলা থেকে উত্তম বুঝাচ্ছে তা নয় বরং শুধু বাক্যে এমনটা বুঝাচ্ছে বাস্তবে সকল পুরুষ উত্তম হওয়া আবশ্যক নয়।
বিঃদ্রঃ এই প্রকারটিকে ইসতিগরাকুস সিফাতও বলা হয়।
আবার কেউ কেউ আলিফ লামে যায়েদাহকে নিচের মত করে ভাগ করেছেন। চাইলে আপনি এভাবে দেখতে পারেন। নিচের নিয়মে ভাগ করলেও দেখা যাবে মূল ব্যপার একই হবে। তবে আপনাদের যদি বুঝতে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
- ১) আলিফ লামে যায়েদাহ
আলিফ লামে যায়েদাহ হচ্ছে অতিরিক্ত আলিফ যা লেখার ক্ষেত্রে আসে এবং এই আলিফ লামকে হযফ বা বিলুপ্ত করলেও অর্থের মধ্যে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনা।
আলিফ লামে যায়েদাহ আবার চার প্রকার।
- ১) ইওয়াজী লাযেম।
- ২)ইওয়াজী গইরে লাযেম।
- ৩)গইরে ইওয়াজী লাযেম।
- ৪)গইরে ইওয়াজী গইরে লাযেম।
- ২)আলিফ লামে গাইরে যায়েদাহ
আলিফ লামে গইরে যায়েদাহ চার প্রকার
- ১)আলিফ লামে জিনসী
- ২)আলিফ লামে ইসতিগরাক্বী
- ৩)আলিফ লামে আহদে খারেজী
- ৪)আলিফ লামে আহদে যিহনী
- আলিফ লামে আহদে যিহনী তিন প্রকার
- ১)আহদে যিকরী
- ২)আহদে ইলমি
- ৩)আহদে হুযুরী
এই লেখাটি ভিডিও আকারে দেখতে চাইলে নিচের ভিডিওটি দেখুন অথবা ইউটিউব এ আমাদের চ্যানেল ভিজিট করুন।
এখানে উদাহরণ দেয়া হয়নি। যেহেতু উপরে সবগুলোর উদাহরণ দেয়া হয়েছে। যদি আরো কছু জানতে চান তাহলে কমেন্ট করুন। ইন শা আল্লাহ যথাসাধ্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুন