ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি আইন করা হলেই কি ধর্ষন বন্ধ হয়ে যাবে : চাই আইনের প্রয়োগ

ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি আইন করা হলেই কি ধর্ষন বন্ধ হয়ে যাবে : চাই আইনের প্রয়োগ 

ধর্ষণ বৃদ্ধির কারন কি



আবু হানিফ,

শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 


সোস্যাল মিডিয়াতে আজ দেখলাম  অনেকেই পোস্ট করেছেন যে, ধর্ষকের শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হচ্ছে বা হবে। আমি এতে খুব বেশি খুশি হওয়ার কারণ দেখি না । কারণ হচ্ছে আমার সন্দেহ এই আইন কতটুকু ফলপ্রসূ হবে,বা এই আইনের প্রয়োগ কতটুকু হবে, আদৌ কি সকলের জন্য সমান প্রয়োগ হবে? আমি ধর্ষকের শাস্তি ফাঁসির বিপক্ষে  নই। আমি বরং ধর্ষকের শাস্তি এর চেয়ে কঠিন কিছু থাকলে সেটাই বাস্তবায়নের পক্ষে ।


আমাদের দেশে অনেক আইন আছে কিন্তু যথা যথ প্রয়োগ নেই। কারণ হচ্ছে, ধর্ষক অল্পতেই পার পেয়ে যায়। তাদেরকে আটক করা হলেও লোক দেখানো আটক করা হয়, তারা ক্ষমতার দাপটে পরবর্তীতে দেখা যায় ছাড়া পেয়ে যায়। অথচ ধর্ষিতাকে সমাজে সবাই চিনে খারাপভাবে।  তাঁকে বিয়ে দেয়া কঠিন হয়ে যায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া যা আমৃত্যুদণ্ডেও একই অবস্থায় থাকবে। অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। বরং কখনো কখনো এমন হবে যে ভিকটিমের যেন কোনো প্রমান না থাকে সে জন্য ধর্ষণের পর হত্যা করা হবে।   আমি মনে করি ধ্বজভঙ্গ বিচার ব্যবস্থার উন্নতি না হলে, ধর্ষণ কোনোভাবেই থামানো যাবেনা। সবার আগে বিচার ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন হতে হবে, বিচার বিভাগ ডিসিশন নিজেই যেন নিতে পারে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে । তাহলে ধর্ষণ অনেকটা কমে যাবে বলে, আমি মনে করি। 


ধর্ষণ রোখতে  রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে হবে 

কিছু কথা না বললেই নয়, আমরা সবসময় সব জায়গায় রাজনীতিকরণ করি। সব কিছুতেই রাজনীতির ছায়া দেখি। কোনো একটা ঘটনা ঘটলে এটাকে মুড়িয়ে পেচিয়ে কোনো দলের উপর চাপিয়ে দেই অথবা ভালো কাজ হলে নিজের দলের দিকে ক্রেডিট ছুড়ে দেই।  ফলে ধর্ষকরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। যার কারণে ধর্ষণ আর বন্ধ হচ্ছে না। এটা একটা অন্যতম কারণ। এ কারণে যতদিন রাজনীতিকরণ বন্ধ না হবে, ততদিন ধর্ষণ বন্ধ করা কারো পক্ষে করা সম্ভব হবে না। যে দলের হোক ধর্ষককে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নয়ত জেলে গিয়েও ধর্ষক বিজয়ের হাসি দিবে যেমনটা আমরা দেখছি। কারণ ধর্ষণের পর লোকালয়ে থাকা তাঁর জন্য অনিরাপদ হলেও জেলে নিরাপদ আছে। নেতারা সব দেখবে।  কয়দিন পর জনগণ থেমে গেলে ছাড়া পেয়ে যাবে।তাই এই দিকটি বিবেচনা করতে হবে। ধর্ষকদের জেলখানায় রাখা হয়েছে কিন্তু তারা মজা-মস্তি আর খোশগল্পে আছেন। এই যদি হয় অবস্থা, এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড আইন কী করবে এখানে? তাই বললাম যে, বিচার ব্যবস্থা অবশ্যই স্বাধীন হতে হবে। এবং সব জায়গায় রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে হবে। 

অন্যদিকে যিদিও দিপু আপা বলেছেন,ধর্ষকের পক্ষে যদি উকিল পাওয়া যায়, সে দেশে ধর্ষণ কি করে বন্ধ হবে। আমি বলি, এটা সঠিক মন্তব্য নয়।  প্রত্যেকটা ধর্ষণের বিচার যদি সময় মত এবং সঠিক হয়। তাহলে এ বাংলাদেশের ধর্ষণ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কীভাবে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে 

ধর্ষণের কারণ শুধু একটি নয়।এর সাথে অনেক কারণ জড়িত আছে।  এই সমাজে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। পরিবার থেকে যে শিক্ষা আসে তা দিন দিন কমে আসছে। চারদিকে অন্যায় অনাচার বেড়ে চলছে আর এগুলো দেখে শিশুরা বড় হচ্ছে। সিনেমাতে জোর করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করার দৃশ্য সারাক্ষণ দেখে যাচ্ছে। নাটক সিনেমার সস্তা বিনোদনের নামে ইউটিউবসহ সব ক্ষেত্রে চলছে নারীর দেহ প্রদশর্ন।এছাড়া ওয়েব সিরিজের নামে চলছে ধর্ষণের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি।  ইন্টারনেটে নারীরাও বিভিন্ন ভাবে নিজেদের আকর্ষণীয় করে প্রদর্শন করছে। এছাড়া রাস্তাঘাটে তো চলছেই।  চারদিকে যখন এভাবে অশ্লীলতার ছয়লাব তখন একটি ছেলে এগুলো দেখতে দেখতে উত্তজেনার তীব্র আকার ধারণ করছে।  পারিবারিক শিক্ষা থাকায় অথবা ধর্মীয় শিক্ষা নিজের জীবনে যারা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে তারা ছাড়া সাধারণত অন্যরা বিপদগামী হচ্ছে। কেউ মাস্টারবেশনে লিপ্ত কেউ সুযোগের সন্ধানে থাকে। ক্লাস নাইন টেনের বাচ্চারাও বান্ধবীর সাথে সুযোগ নিচ্ছে।  আরেক শ্রেনী ক্ষমতা দেখিয়ে যাকে তাঁকে করছে। আবার বস তাঁর কর্মীকে সুযোগে করে নিচ্ছে। যার যেভাবে সুযোগ নারীকে অসহায়ে  ফেলে করে নিচ্ছে। কখনো নারী প্রকাশ করছে আবার কখনো নিজের সম্মান রাখতে বা নিজের চাকরি বাচাতে বা সুযোগ চালু রাখতে দিনের পর দিন নিজেকে দিয়েই যাচ্ছে।

আর কোনো নারী যখন অসহ্য হয়ে বিচার চায় তখন শুধু শুধু সে মানুষের কাছে খারাপ হয়, ভাইরাল হয়।  বিচারের ব টাও পায় না। আমি বলছিনা সব নারী ভালো। সব মিলে দেখা যাচ্ছে বিচারহীনতা। 

ভাবে দায়ী। অপরাধী অপরাধ করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু শাস্তি যদি না থাকে তখন অপরাধীর অবস্থা কেমন হবে?

এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সমাজে ধর্ষণ বাড়বে না কোথায় বাড়বে? এসব কারণে মূলত ধর্ষণ দিন দিন বেড়েই চলছে।

যা হোক সব মিলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নতি দরকার। সবাই পরিবার থেকে পরিবর্তন আনুন। নয়ত এই মহামারী বন্ধ করা আরো কঠিন হয়ে যাবে।  

ধর্ষণের জন্য কি শুধু পোশাক দায়ী

 কেন ধর্ষণ বেড়ে চলেছে লেখাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন    




আমাদের ব্লগে আপনিও লেখা পাঠাতে পারেন। প্রতিটি লেখার জন্য আমরা মান ভেদে ৫-১০৳ আপনাকে পারিশ্রমিক দেব ইন শা আল্লাহ।   

কোন মন্তব্য নেই

Barcin থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.