স্তন ক্যান্সার ও টিউমার কেন হয় , প্রতিকার ও করণীয়

 স্তন ক্যান্সার ও টিউমার কেন হয় : প্রতিকার ও করণীয়

স্তন ক্যান্সারের কারণ কি , স্তন টিউমার কেন হয়


স্তন কি বা কাকে বলে

স্তন এক প্রকার রুপান্তরিত ঘর্মগ্রন্থি। মানবদেহের বুকের সন্মুখ অংশে দুইপাশে বক্ষপিঞ্জরের বাইরে এটি অবস্থিত এবং ত্বক দ্বারা আবৃত।স্ত্রীদেহে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে এটি সুগঠিত হয়।সন্তান প্রসবের পর প্রোল্যাকটিন হরমোনের প্রভাবে স্তন থেকে দুধ নিঃসৃত হয়।বয়োঃসন্ধিকালীন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গোনাডোট্রোপিক হরমোন ক্ষরণ বেড়ে যায় যা ডিম্বাশয় থেকে স্ত্রী প্রজনন হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন ক্ষরণ করে।এই হরমোনদ্বয়ের প্রভাবে স্তনে চর্বি জমা হয় এবং স্তন স্ফীত হতে থাকে এবং একই সাথে স্তনের অভ্যন্তরীণ কলা ও কোষবিভাজন বেড়ে যায় এবং স্তন পূর্ণতা লাভ করে।


স্তনের গঠন কীভাবে

স্তনের গঠন পর্যালোচনা করার জন্য একে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।যথাঃ।

  • ১.ত্বক
  • ২.প্যারেনকাইমা 
  • ৩.স্ট্রোমা

এদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

ত্বকঃ- ত্বক স্তনকে আবৃত করে রাখে।স্তনে যে কালো বৃন্ত দেখা যায় তাকে বলে স্তনবৃন্ত বা নিপল।স্তনবৃন্তে ১৫-২০ টি ল্যাকটিফেরাস নালিখা উন্মুক্ত হয়।স্তনবৃন্তের চারপাশে গোলাকার একটি অংশ দেখা যায়।একে  Areola বলে।এ অংশে প্রচুর পরিমানে সিবেসিয়াস গ্রন্থি থাকে যা গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালীন সময় স্ফীত হয়।

প্যারেনকাইমাঃ-এটি গ্রন্থিময় কলা দ্বারা গঠিত যা দুধ নিঃসরণ করে।এ গ্রন্তিতে ১৫-২০ টি লোব থাকে প্রত্যেক লোব একগুচ্ছ অ্যালভিওলাই দ্বারা গঠিত এবং একটি ল্যাকটিফেরাস নালিকার সাথে যুক্ত।প্রত্যেকটি ল্যাকটিফেরাস নালিকা স্তনবৃন্তে উন্মুক্ত হয়।

স্ট্রোমাঃ- এটি গ্রন্থির সাহায্যকারী কলা।এটি যোজক কলা দ্বারা গঠিত যা মূলত মেদকলা ও ফাইব্রাস কলা।ফাইব্রাস স্ট্রোমা লিগামেন্ট তৈরী করে যা স্তনকে বক্ষপ্রাচীরের সাথে যুক্ত রাখে।


স্তনের সাধারন সমস্যা কি কি জেনে নিন

  • *গর্ভাবস্থায় বা স্তনদানের সময় স্তন ব্যথা বা স্তন ভারী মনে হতে পারে।এ সময় স্তনে রক্তপ্রবাহ অনেক বেড়ে যায় এবং দুধ উৎপাদন হতে থাকায় স্তন ভারী লাগা বা সামান্য ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • *শিশু জন্মের পর শিশুর স্তন থেকে দুধের মত পদার্থ ক্ষরণ হতে পারে।এটি স্বাভাবিক এর কোন চিকিৎসা প্রয়োজন নেই।মায়ের ডিম্বাশয় ও অমর(Placenta) থেকে নিঃসৃত হরমোনের প্রভাবে এটি হতে পারে যা কিছুদিন পর এমনিই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
  • *স্তনে প্রদাহ (Acute Mastitis) খুব সচরাচর দেখা যায় যা প্রধানত স্তন্যদানকারী মায়েদের হয়ে থাকে।সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এটি সংক্রমিত হয়।এতে স্তন ব্যথা এবং লাল হয়ে যায়।


স্তন টিউমার কি

স্তনের টিউমার দুই প্রকার হতে পারে।যথাঃ-

  • ১.বিনাইন টিউমার
  • ২.স্তন ক্যান্সার

স্তনের বিনাইন টিউমার নিরাপদ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ উপশম করা যায়।এটি ক্যান্সারের মত মারাত্নক নয়।এটি আশেপাশের কোন কলা/টিস্যুতে ছড়ায় না।

স্তন ক্যান্সার দূরারোগ্য ব্যাধি।প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা না হলে এটি দেহের বিভিন্ন স্থানে, যেমনঃ ফুসফুস, যকৃত,অস্থি ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

স্তন টিউমার কেন হয়

স্তন ক্যান্সারের কারনগুলি নিচে তুলে ধরা হলোঃ-

  • ★স্তন টিউমার জিনগত কারণে হতে পারে 
  • ★যে সব পরিবারে মা /খালা /অন্যান্য রক্তসম্বন্ধীয় আত্নীয়দের স্তন ক্যান্সার থাকে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের স্তন ক্যান্সের হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • ★বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
  • ★যাদের এক স্তনে ক্যান্সার হয়েছে তাদের অন্য স্তনেও হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। 
  • ★৩৫ এর পর প্রথম সন্তান জন্মদানকারীদের।
  • ★স্তন্যপান না করালে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।

তাছাড়া আরো অনেক কারনে স্তন ক্যান্সার হতে পারে,তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অজানা।


স্তন ক্যান্সার প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়

স্তন ক্যান্সার অন্যান্য সকল ক্যান্সারের মতো প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়।এটি প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতার বিকল্প নেই।অশিক্ষা,কুসংস্কার, ভীতি,লজ্জা,অপবাদ,অভিশাপসহ আরও অনেক কারনেই নারীরা তাদের গোপন রোগ সমূহ প্রকাশ করতে চান না।

পরবর্তীতে যার কারনে মারাত্নক ব্যাধিতে রূপ নেয়।তাই স্তন ক্যান্সার সহ অন্যান্য স্ত্রীরোগ যেমনঃ-জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিহত করতে সর্বস্তরের মানুষের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।স্তন ক্যান্সার রোধে যেসকল ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-

  • ★স্তনে কোন চাকা অনুভূত হলে তা যতই ছোট হোক অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
  • ★বগলে কোন চাকা অনুভূত হলে তাও চিকিৎসা করানো উচিত। কেননা এটিও স্তন ক্যান্সারের খুব গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। 
  • ★যাদের পারিবারিক স্তন ক্যান্সার আছে তাদের প্রতি বছর বছর বা অন্তত ৩ বছর পর পর মমোগ্রাফি করানো উচিত।
  • ★যেসব কারনে স্তন ক্যান্সার হয় তা এড়িয়ে চলা উচিত।
  • ★সন্তান প্রসবের পর থেকে ২ বছর শিশুকে স্তন্যপান করানো উচিত।


প্রতিরোধই প্রতিকার।তাই আসুন আমরা সচেতন থেকে স্তন ক্যান্সার মুক্ত থাকি।

ধন্যবাদ


আমাদের ব্লগে লেখা পাঠিয়ে আয় করতে যোগাযগ করুন

কোন মন্তব্য নেই

Barcin থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.