জরায়ুর ক্যান্সার কেন হয় : লক্ষণ, কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
জরায়ুর ক্যান্সার কেন হয় : লক্ষণ, কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রকোপ উন্নত বিশ্ব থেকে অনেক বেশি।প্রকৃতপক্ষে নারীদের অন্যান্য ক্যান্সারের চেয়ে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের হার বেশি। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ব্যাপ্তি অন্য ক্যান্সারের থেকে বেশি।
জরায়ুমুখ (Cervix)
এটি জরায়ুর নিচের অংশে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র মাংসল অঙ্গ যা জরায়ু ও যোনিপথের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করে।এটি ২.৫ সে.মি. লম্বা হয়।এই যোনিপথের সন্নিহিত অংশ স্তরীভূত আবরণীকোষ দ্বারা গঠিত এবং জরায়ুর দিকের অংশ স্তম্ভাকার কোষ দ্বারা গঠিত এবং এই দুই ধরনের কোষগুচ্ছ খুব সূক্ষ্ণ সীমা দ্বারা বিভক্ত থাকে।এ সীমা বিভিন্ন বয়সে এবং বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়।এখানেই মূলত জরায়ুমুখ ক্যান্সার দেখা যায়।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের কারণসমূহ
★জরায়ুমুখ ক্যান্সার একটি ভাইরাসঘটিত ক্যান্সার। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস নামক এক প্রকার ভাইরাস এর জন্য দায়ী।
★অস্বাস্থ্যকর, নোংরা ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যা জরায়ুমুখ ক্যান্সার এর কারণ হতে পারে।
★অপরিণত বয়সে বিয়ে বা শারিরীক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস সংক্রমনের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
★কম বয়সে সন্তান গ্রহণ করা এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
★একাধিক ব্যক্তির সাথে শারিরীক সম্পর্ক থাকলে প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমন হতে পারে।
★স্বামীর প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমন থাকলে স্ত্রীর দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ
জরায়ু ক্যান্সার একটি প্রচলিত সমস্যা।সব রোগেরই কিছু লক্ষণ থাকে,তেমনি এই ক্যান্সারের ও কিছু লক্ষণ আছে।লক্ষণ গুলি জানা সকলের জন্যই জরুরি তাহলে রোগ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা যাবে।
তাই আসুন জেনে নেই প্রাথমিক লক্ষণ গুলি
★তলপেটে ব্যথা,বেশির ভাগ সময় ব্যথাটা শারিরীক সম্পর্কের সময় তলপেটে বা মাসিকের রাস্তায় ব্যথা হতে পারে।
★যোনিপথে অস্বাভাবিক রক্তপাত।ঋতুস্রাব ছাড়াও অন্যান্য সময় মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হওয়া এই ক্যান্সারের অন্যতম উপসর্গ।
★রক্তপাত ছাড়াও দূর্গন্ধযুক্ত তরল পদার্থ বের হওয়া।
★এ ক্যান্সার চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তা অন্যান্য অঙ্গকেও আক্রান্ত করে ফেলে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত
★অস্বাভাবিক রক্তপাত
আগেই বলা হয়েছে অস্বাভাবিক রক্তপাত জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ,তাই অস্বাভাবিক রক্তপাত হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।★যৌনমিলনের সময় ব্যথা
যৌনমিলনের সময় ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।★অনেকদিন ধরে মাসিক হওয়া
মাসিক সাধারণত তিন থেকে সাতদিন স্থায়ী হয়।এর থেকে বেশি সময় হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।★ওজন কমে যাওয়া
হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়াটা ও জরায়ুমুখের ক্যান্সারের লক্ষণ তাই খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।★প্রস্রাবে অস্বস্তি
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও এই ক্যান্সারের লক্ষণ, তাই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।★কোমর ব্যথা
কোমর ব্যথা কে আমরা স্বাভাবিক মনে করলেও তা সবসময় স্বাভাবিক ব্যপার নয়।কোমর ব্যথাও জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ★প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা এরকম হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরের অন্যান্য সমস্যার কারনে এটি হলেও, মনে রাখতে জরায়ু ক্যান্সারের একটি অন্যতম লক্ষণ এটি।★পায়ে ব্যথা
পায়ে ব্যথা বা ফোলাভাব ক্যান্সার বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে।প্রথমে হালকা অস্বস্তি থেকে ধীরে ধীরে খারাপের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রতিরোধ উপায়
সচেতনতাই পারে আমাদেরকে জরায়ুমুখ ক্যান্সার থেকে মুক্তি দিতে।এই ক্যান্সারের কারন,উপসর্গ ও এটি প্রতিরোধের উপায় সম্বন্ধে নারীদের জ্ঞান থাকা জরুরি। তাই আসুন আমরা এর প্রতিরোধ জেনে নেই।
★অপরিচ্ছন্নতা ও অধিক ঘনবসতি যথাসম্ভব বর্জন করা।
★একাধিক শারিরীক সম্পর্ক না করা।
★বর্তমানে অনেক সহজ ও কমমূল্যের পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব।প্রত্যেক নারীর ত্রিশ বছর বয়সের পর অথবা বিয়ের দশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তিন বছর পর পর এ পরীক্ষা করা উচিত।প্রাথমিক ভাবে এটি শানাক্ত করা গেলে এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব।যে পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা যায় তা হলোঃ-
- ★ভায়া (Via)
- ★ভিলি (Vili)
- ★প্যাপ স্মেয়ার (Pap Smear Test)
- ★কলপোস্কপি (Colposcopy)
- ★এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষা ( HPV DNA Test)
আমাদের দেশে অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এ পরীক্ষাগুলো করা হয়।
তাই আসুন নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে আমরা একটি সুস্থ পৃথিবী গড়ে তুলি।
ধন্যবাদ
কোন মন্তব্য নেই