আরবি সাহিত্য সমালোচনা : সাহিত্য সমালোচনা কি, জাহেলি যুগের সাহিত্য সমালোচনার চিত্র

আরবি সাহিত্য সমালোচনা : সাহিত্য সমালোচনা কি,  জাহেলি যুগের সাহিত্য সমালোচনার চিত্র 

আরবি সাহিত্য সমালোচনা : সাহিত্য সমালোচনা কি,  জাহেলি যুগের সাহিত্য সমালোচনার চিত্র


নাকদ শব্দের পরিচয় ও অর্থ 


النقد والتنقاد والانتقاد 

1-تمییز الدراهیم واخراج الزیف منها 

নানা দিরহাম বাঁচাই করে নকল দিরহাম বের করা, যেমন বলা হয়ে থাকে—

نقدت الدراهیم وانتقدتها 

আমি দিরহাম বাঁচাই করলাম এবং ভালো দিরহাম বের করলাম।

একটি কবিতার চরণও এই অর্থ সমর্থন করে— 

تنفی یداها الحصی فی كل هاجرۃ -

نفی الدراهیم تنقاد الصیاریف 

উটনী প্রতি দুপুরবেলা পা দিয়ে নুড়িকণাকে ঠিক সাইরাফির (মুদ্রাকর) দেরহাম সরানোর মতোই সরিয়ে দেয়( দ্রুত চলে) 

এখানে نقد দেরহাম বাঁচাই করার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

1-التمییز بین جید الشی من ردیٸته 

কোনো জিনিসকে যাচাই করে খারাপ থেকে ভালোটা বাঁচাই করা।

3-الاعطاٸ والاخذ 

দেওয়া ও নেওয়া বা দান ও গ্রহণ

4- مناقشۃ الاقوال والاراٸ

বিভিন্ন মতামত ও রায়ের পর্যালোচনা করা

5-تناول الاشیاٸ واحدا واحدا 

কোনো জিনিস একটা একটা করে নেওয়া।

6- الحكم والتفكیر 

চিন্তা করা ও হুকুম দেওয়া। 

7-تمییز الجید من العملۃ الزاٸف 

নকল মুদ্রা থেকে সঠিক ও প্রচলিত মুদ্রা বের করা।


পারিভাষিক অর্থ—

تقدیر النص الادبی تقدیرا صحیحا وبیان قیمته ودرجته الادبیۃ

সাহিত্যকর্মের বিশুদ্ধ বিচার, তার মূল্য নিরূপণ এবং সাহিত্য মানের বিশ্লেষণই 'নকদ' বা সাহিত্য সমালোচনা। 

2تقدیر النص الادبی تقدیرا صحیحا یكشف المواطن الجودۃ والرداٸۃ فیه ویتبین درجته وقیمته 

সাহিত্যকর্মের বিশুদ্ধ বিচার-বিশ্লেষণ যা ওই সাহিত্যকর্মের নানা দিক, সুন্দর ও শক্তিশালী অংশ এবং দুর্বল দিকগুলোও সমানভাবে তুলে ধরে এবং তার সাহিত্যমূল্যও নির্ধারণ করে।


غرض النقد 

معرفۃ القواعد التی نستطیع ان نحكم بها علی القطعۃ الادبیۃ الجیدۃ والردیٸۃ فان كانت جیدۃ أو ردیٸۃ فما درجتها من الحسن والقبح.

কিছু নিয়ম জানা যার উপর নির্ভর করে নানা সাহিত্য— কণিকা, তার ভালো-খারাপ যাচাই করার ক্ষমতা /যোগ্যতা অর্জন করা। আ৷ তা যদি ভালো বা খারাপ হয়, তাহলে তার মান কি, কার নির্ণয় করার জ্ঞান অর্জনই 'নকদ' এর উদ্দেশ্য। 


- معرفۃ الوساٸل التی یمكننا من تقویم ما یعرض علینا من الاثار الادبیۃ


কিছু উপায় ও উপকরণ জানা যা আমাদের যে কোনো সাহিত্য কর্মের মূল্যায়নে সক্ষম করে তুলবে।

موضوع النقد 

الادب তথা সাহিত্য


জাহেলি যুগে আরবি সাহিত্য সমালোচনা বা 'নকদে'র চিত্র ও বিকাশ


ভূমিকাঃ জাহেলি যুগ আরবী ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ যুগ। এই যুগে আরবী সাহিত্যের অতি উৎকৃষ্টতম রচনাগুলো রচিত হয়। সাহিত্যের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল এই যুগে। সাহিত্যের ব্যাপক কদর ও চর্চা হলেও এই যুগে সাহিত্যের নানা শাখা স্বতন্ত্র রূপ লাভ করেনি। তবে বিক্ষিপ্তভাবে সেইসব চর্চিত হয়েছে। তেমনই একটা শাখা হলো 'নাকদ' তথা সাহিত্যসমালোচনা। সাহিত্যের এই শাখা স্বতন্ত্ররূপে চর্চিত হয়েছে অনেক পরে। তবে জাহিলি যুগে বেনামে সাহিত্যের এই ধারা প্রচলিত ছিলো। তার কিছু বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো।

• জাহিলি যুগে নানারূপে সাহিত্যসমালোচনা হতো যেমন

— উকায মেলায় বড় বড় কবিদের সামনে কবিতা উপস্থাপনের মাধ্যমের কবিতার ভালো—খারাপ দিক নির্ণয় করা হতো।

—মুয়াল্লাকা নিয়ে স্বতন্ত্র আলোচনা হতো।

— কা'বার দেওয়ালে কবিতা ঝুলিয়ে রাখা হতো। এমন নানা পদ্ধতিতে কাব্যসমালোচনা ও কবিতার মান ও নানা দিক নির্ণয়ের রীতি প্রচলিত ছিলো। উল্লেখ্য যে, জাহিলি যুগে প্রধান সাহিত্যসমালোচক ছিলেন নাবিগা আযযুবইয়ানী। তার একটা স্বতন্ত্র তাঁবু ছিলো যেখানে কাব্যলোচনা ও কবিদের মজলিস হতো। তেমনই একটা মজলিসের চিত্র এখানে তুলে ধরা হলো, যা আমাদের ওই সময়ের সাহিত্যসমালোচনার ধরণ ও পদ্ধতি বুঝার পথে সহায়ক হবে, ইনশাআল্লাহ।


একবার নাবিগা আযযুবইয়ানির কাছে কবি হাসসান, খানসা ও আ'সা আসেন। যথারীতি কাব্যালোচনা ও কবিতা পাঠ শুরু হয়। এক পর্যায়ে কবি খানসা তার রচিত একটি কবিতা পাঠ করেন। এখানে উল্লখ্য যে, খানসা ছিলেন মহিলা কবি। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তার কবিতাটি ছিলো একটি শোকগীতি। তিনি বলেন

— 

وان صخرا لوالینا وسیدنا ....وان صخرا اذا نشتو لنحار

নিসন্দেহে 'সাখার' ( কবির ভাই) আমাদের অভিভাবক ও নেতা। শীতকালে সে দুর্ধর্ষ, নির্বিচারে হত্যা করে। 


এই দীর্ঘ কবিতা শুনে নাবিগা মুগ্ধ হয়ে থাকে বলেন, 'খানসা মানুষ ও জীনদের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ কবি।'

জারির বলেন, 'খানসাকে বাদ দিলেই আমিই কবিকূলের সম্রাট।' (শ্রেষ্ঠ কবি)


উকায মেলায় কবিরা কাব্য নিয়ে প্রতিযোগিতা করত। সেইসব কবিতা মূল্যায়নের ভার ছিলো নাবিগা আযযুবয়ানীর কাঁধে। আর সেখানে খানসা তার বিখ্যাত শোকগীতি পাঠ করেন। এই শোকগীতি শুনে তিনি বলেন,

' আপনার পূর্বে আ'শার কবিতা না শুনলে বলতাম, 'আপনিই শ্রেষ্ঠ কবি।' 

এ কথা হাসসান ক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম আমি সে এবং আপনার চেয়ে সেরা কবি।' 


নাবিগা বলল, ' কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলছ? 

তখন হাসসান পাঠ করে,

لنا الجفنات الغر یلمعن بالضحی 

واسیافنا یقطرن نجدۃ دما

ولدنا بنی العنقاٸ وابنی محرق 

فاكرم بنا خالا واكرم بنا ابنما


আমাদের রয়েছে উজ্জ্বল পাত্র যা পূর্বাহ্নে জ্বলজ্বল করে আর আমাদের তরবারি থেকে রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে। আমরা জন্ম দিয়েছি বনী আনকা এবং মুহাররাকের দুই ছেলেকে। আমরা নানা বংশের দিক বেশ অভিজাত। 

এবার নাবিগা বলেন, ' তুমি আসলেই বড় কবি তবে কিছু বিচ্যূতি আছে এই কবিতায় যেমন, 

الجفنات এর স্থলে جفان অত্যধিক যুৎসই হতো

কারন তাহলে সংখ্যা বৃদ্ধি। আর পাত্রের সংখ্যা বেশি উদারতাও বেশি বুঝা যেত। আর یلمعن بالضحی এর বদলে یبرقن بالدجی (রাতে চমকায়) হলেও আরও বেশি মর্মবাহি হতো। یقطرن دما এর পরিবর্তে یجرین دما হলে বেশ অর্থপূর্ণ হতো। আর তুমি মামার বংশ নিয়ে প্রশংসা করেছো অথচ আপন বংশের ব্যাপারে গর্ব করনি।'


এই জাহিলী যুগের কাব্যসমালোচনার চিত্র। এই থেকে বুঝা যায় যদিও সাহিত্যের এই শাখা পরবর্তীতে রূপ লাভ করেছে কিন্তু জাহিলী যুগে তা প্রচলিত ছিলো।


কোন মন্তব্য নেই

Barcin থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.